কোয়েটায় হামলার দায় স্বীকার আইএসের

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটা’র পুলিশ প্রশিক্ষণ কলেজে আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। আইএসের বার্তা সংস্থা আমাক এজেন্সিতে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠীটি। তবে কোয়েটার পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল শের আফগান জানান, ‘হামলাকারীরা আফগানিস্তানে তাদের নির্দেশদাতাদের সঙ্গে কথা বলছিল। তিনজনের গায়েই আত্মঘাতী বিস্ফোরক ছিল।’ তার ধারণা, হামলাকারীরা জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-জাংভি-র  আল আলমি অংশের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

কোয়েটায় সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ এ হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে এরইমধ্যে ৬০ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ১২০ জন। হামলার প্রত্যক্ষদর্শী একজন ক্যাডেট সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি তিনজন ব্যক্তিকে কালাশনিকভ বহন করতে দেখি... তারা ছদ্মবেশ ধারণ করে চেহারা লুকিয়ে এসেছিল। তারা গুলি করতে করতে ছাত্রাবাসে প্রবেশ করে। কিন্তু আমি দেয়াল টপকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হই।

সোমবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে নয়টার দিকে এই হামলা চালানো হয়। নিহতদের বেশিরভাগই ক্যাডেট শিক্ষার্থী। হামলার সময় সেখানে অন্তত ৭০০ ক্যাডেট উপস্থিত ছিলেন। উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে হামলায় হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডন।
তিন আত্মঘাতী জঙ্গি বোমাবাহী পোশাক পরে প্রশিক্ষণ কলেজের মূল গেট দিয়ে ঢোকে। এ সময় গেটে দাঁড়ানো প্রশিক্ষণ কলেজের পাহারাদারদের গুলি করে হত্যা করা হয়। কলেজের ভিতরে ঢুকে এরা সেখানে জোরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে প্রশিক্ষণ শিবিরে থাকা লোকজনদের জিম্মি করে।

হামলার খবর জানতে পেয়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও সেখানকার পুলিশ যৌথ অভিযানে নামে। আত্মঘাতী বন্দুকধারীদের সঙ্গে তাদের চার ঘণ্টাব্যাপী গুলি বিনিময় চলে। পরে দুই জঙ্গি আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। তৃতীয় জঙ্গি নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়। সেনা-পুলিশের এই যৌথ অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে। সেনাদের কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সেখানকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

এর আগে প্রাথমিকভাবে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল শের আফগান বলেন, অভিযানের পুরো ঘটনা তিনি এখনো জানেন না। তবে হামলায় ২০ জনেরও বেশি নিহত ও অন্তত ৬৫ জন আহত হয়েছেন বলে তিনি নিশ্চিত করেন। তবে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেও সতর্ক করেছিলেন।

এর আগে ২০০৬ ও ২০০৮ সালেও সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় ট্রেইনিং কলেজটি। সেসময় কলেজ মাঠে রকেট নিক্ষেপ করে সন্ত্রাসীরা। ৮ বছরের মাথায় আবারও আক্রান্ত হলো বেলুচিস্তানের সবচেয়ে বড় ট্রেনিং কলেজটি।

এসব হামলাকারী প্রতিবেশী আফগানিস্তান থেকে এসেছিল বলে দাবি পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের। অভিযানের সময় এরা নাকি আফগানিস্তানে যোগাযোগ করছিল বলে দাবি পাকিস্তানের।

প্রাদেশিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি বলেছেন, ‘হামলার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ফ্রন্টিয়ার কর্পসসহ নিরাপত্তা বাহিনী ছুটে গিয়ে অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে তিন জঙ্গিও নিহত হয়েছে। যদিও দু’জন আত্মঘাতী বিস্ফোরণেই প্রাণ হারিয়েছে, তৃতীয় জন নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে।’

তিনি আরও জানান, ‘হামলার সময় ওই কলেজে নবনিযুক্ত ৭০০ পুলিশ সদস্য ছিলেন, তাদের নিয়োগ পরবর্তী প্রশিক্ষণ চলছিল। তবে তারা এখন নিরাপদে আছেন।’

/এমপি/