চলতি বছর ভূমধ্যসাগরে ৩৮০০ শরণার্থীর মৃত্যু

noname২০১৬ সালে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে পাড়ি দিতে গিয়ে রেকর্ড সংখ্যক শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে। প্রাণহানির এ সংখ্যা অন্তত ৩ হাজার ৮০০ বরে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৭৭১ জন।

চলতি বছর প্রাণহানির এ সংখ্যা ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত। সে হিসাবে বছরের বাকি সময়ে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, পাচারকারীরা এখন ছোট নৌকায় করে পাচারের চেষ্টা করছে। গত বুধবার লিবিয়ার উপকূলে একটি আংশিক প্লাবিত ডিঙি নৌকায় ২৫ জনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। এ সময় ১০০ অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়।

২৬ অক্টোবর বুধবার টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে ইউএনএইচসিআর জানায়, ভূমধ্যসাগরের সবচেয়ে বিপদজনক রুট হচ্ছে লিবিয়া ও ইতালি। এই পথ দিয়ে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেওয়া প্রতি ৪৭ জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। যেখানে  তুরস্ক থেকে গ্রিস রুটে মৃত্যুর অনুপাত প্রতি ৮৮ জনের মধ্যে ১ জন। এ রুটে প্রাণহানির হার বৃদ্ধির কারণ হিসাবে নিম্নমানের জলযান ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছে ইউএনএইচসিআর।

জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রতিনিয়ত স্বপ্নভূমির উদ্দেশে দেশ ছাড়ছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জাহাজ বা নৌকায় চড়ে বসছেন অসংখ্য শরণার্থী। আর উত্তাল সাগরের বুকে একের পর নৌকাডুবিতে প্রাণ যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষের। তারপরও ঝুঁকিপূর্ণ পথে স্বপ্নভূমির উদ্দেশ্যে পাড়ি দেওয়া ছাড়ছে না মানুষ। ২০১৬ সালে প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার অভিবাসী ভূমধ্যসাগর পার হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশ করেছে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল এক লাখের মতো।

 noname

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুনিয়াজুড়ে জীবন বাঁচাতে আর মাথা গোঁজার জন্য নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর নানা দিকে ছোটাছুটির ঘটনা এর আগে আর ঘটেনি। ২০১৪ সালে যুদ্ধ-দাঙ্গাপীড়িত বা অভাবের তাড়নায় প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ নিজের জন্মভূমি আর ঘরবসত ছেড়ে নানা দেশে পাড়ি দিয়েছিল। সেই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বজুড়ে শরণার্থীদের একটা বড় অংশই যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার নাগরিক। যুদ্ধাবস্থা থেকে বাঁচতে দলে দলে ভিনদেশের পথে ছুটছেন দেশটির বাসিন্দারা।

২০১৫ সালে ইউরোপের অভিবাসী এবং শরণার্থী–বিষয়ক সংগঠনগুলো মূল সমস্যার পাঁচটি উপাদান চিহ্নিত করেছে। এগুলো হচ্ছে—১. সিরিয়া, ইরাক ও লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধের তীব্রতা আরও বেড়ে যাওয়া, ২. যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে শিগগিরই সমস্যা সমাধানের আশা না থাকা, ৩. প্রতিবেশী দেশগুলোর শরণার্থীদের সমস্যা ও পুনর্বাসনের ব্যাপারে অনীহা, ৪. তুরস্কে বসবাসরত সিরিয়ার শরণার্থীদের যেকোনো সময় ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা, ৫. সাবেক যুগোস্লাভিয়ার বিভক্ত বলকান রাষ্ট্র সার্বিয়া, কসোভো মন্টেনেগ্রো ও মেসিডোনিয়ার মতো দেশগুলোতে অর্থনৈতিক বিপর্যয়।

২০১৫ সালে সমুদ্রে তুরস্ক ও গ্রিসের মাঝামাঝি এলাকায় নিহত হয়েছেন ৭০০-এর বেশি শরণার্থী। এদের মধ্যে অন্তত ১৮৫ জন শিশু। এই শিশুদের অন্তত পাঁচ শতাংশের বয়স দুই বছরের কম। ভাগ্যবিড়ম্বিত এসব শিশুদের অধিকাংশই সিরিয়া, আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে পরিবারের সঙ্গে যাত্রা করেছিল। এদের অধিকাংশের বয়স ১২ বছরের নিচে।

২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে তুরস্কের উপকূলে সন্ধান মেলে আয়লান নামের এক সিরীয় শিশুর মৃতদেহ। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে নিথর পড়ে থাকা শিশু আয়লান কুর্দির নাম শুনলে এখনও স্তব্ধ হয়ে যান অনেকে। ছোট নৌকায় থাকা আয়লান ও তার ভাই ভেসে যায় তুরস্কের সৈকতে। তাদের মা ভেসে যান দূরের অন্য এক সৈকতে। এখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সপরিবারে সাগরে ভাসছেন হাজারো আয়লান কুর্দি। এই শরণার্থীদের সলিল সমাধি যেন থামছেই না। সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি।

/এমপি/