মারাকেশ জলবায়ু সম্মেলন: উষ্ণতা রোধে ঐক্যবদ্ধ ১৯৭টি দেশ, কর্মপদ্ধতি ঘোষণা

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার দাবিতে বিক্ষোভরতরাজলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার ডাক দিয়েছেন বিশ্বের ১৯৭টি দেশের প্রতিনিধিরা। বৈশ্বিক উষ্ণতা ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধভাবে ‘দ্য মারাকেশ অ্যাকশন প্রোক্লেমেশন’ নামের কর্মপদ্ধতি ঘোষণা করেছেন তারা। মরক্কোর মারাকেশে আয়োজিত সম্মেলনে দুইদিন ধরে নানা তর্ক-বিতর্কের পর বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) এ কর্মপদ্ধতি ঘোষণা করা হয়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক উষ্ণতা ঠেকাতে ‘দ্য মারাকেশ অ্যাকশন প্রোক্লেমেশন’-এ সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অঙ্গীকারের আহ্বান জানানো হয়েছে। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে আনতে পারেন বলে যে হুমকি রয়েছে তার বিরুদ্ধেই দেশগুলো এ ঐক্যবদ্ধ জবাব দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অবশ্য, ওই ঘোষণায় সরাসরি ট্রাম্প বা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে এ ধরনের কিছু সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি।
‘দ্য মারাকেশ অ্যাকশন প্রোক্লেমেশন’-এ ১৯৭টি দেশ দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছে যে বিশ্ব যে নজিরবিহীন হারে উষ্ণ হচ্ছে তা তারা বিশ্বাস করে। ঘোষণায় বলা হয়, বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবেলা করা প্রত্যেক দেশের জন্যই ‘জরুরি দায়িত্ব’।
ঘোষণা আরও বলা হয়, ‘এ বছর বিশ্বজুড়ে এবং বিভিন্ন ফোরামে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার ক্ষেত্রে অসাধারণ অগ্রগতি লক্ষ্য করেছি। এ গতি অপরিবর্তনীয়। আমাদের কাজ হলো এ অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে দ্রুত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গতকরণ কমিয়ে আনা এবং অভিযোজন প্রচেষ্টাকে জোরালো করা।’
জলবায়ু চুক্তির পক্ষের প্রচারণাকারীরা এ ঘোষণাকে জরবায়ুর পরিবর্তন মোকাভেরা ইস্যুতে বড় ধরনের বৈশ্বিক ঐক্য বলে মনে করছেন। ক্যাম্পেইন গ্রুপ ক্রিশ্চিয়ান এইড-এর মোহাম্মদ আডৌ বলেন, ‘এত বেশি সংখ্যক রাষ্ট্রপ্রধান এক জোট হয়ে কোনও নীতিমালার ব্যাপারে প্রকাশ্য ঘোষণা দেওয়ার ঘটনা বিরল। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন রয়েছে। এতে এও পরিষ্কার যে বিশ্বনেতারা প্রতিজ্ঞা করেছেন আমাদের পৃথিবীর ভবিষ্যতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তা ট্রাম্পকে ছিনিয়ে নিতে দেবেন না তারা।’

বিভিন্ন দেশের পতাকা
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মঙ্গলবারই ‘দ্য মারাকেশ অ্যাকশন প্রোক্লেমেশন’-এর কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু তা নিয়ে মতভেদ থাকায় আলোচনা চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার এ নিয়ে সমঝোতা হয়।উল্লেখ্য, প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের বিপন্নতার প্রেক্ষিতে গত বছরের ডিসেম্বরে প্যারিসে কপ ২১ নামের একটি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো একটি জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হন বিশ্বনেতারা। গত এপ্রিলে ১৭৫টি দেশ ওই সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তির আওতায় বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। চুক্তির লক্ষ্যমাত্রায় আরও রয়েছে- গাছ, মাটি ও সমুদ্র প্রাকৃতিকভাবে যতটা শোষণ করতে পারে,২০৫০ সাল থেকে ২১০০ সালের মধ্যে কৃত্রিমভাবে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ সেই পর্যায়ে নামিয়ে আনা। প্রতি ৫ বছর অন্তর ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ রোধে প্রত্যেকটি দেশের ভূমিকা পর্যালোচনা করা। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে গরিব দেশগুলোকে ধনী দেশগুলোর ‘জলবায়ু তহবিল’ দিয়ে সাহায্য করা। চুক্তিটি বাস্তবায়ন করতে কমপক্ষে ৫৫টি দেশের আইনসভার (পার্লামেন্ট) অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়, যারা নিঃসরিত কার্বনের অর্ধেকেরও বেশির জন্য দায়ী। অর্থাৎ অন্তত ৫৫ শতাংশ কার্বন নির্গতকরণের জন্য দায়ী এমন ৫৫টি দেশে অভ্যন্তরীণভাবে চুক্তিটি অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত প্যারিস জলবায়ু চুক্তি কার্যকর করতে যে সংখ্যক সমর্থনের প্রয়োজন ছিল তা ৪ নভেম্বরেই শেষ হয়। অর্থাৎ ওইদিন থেকেই চুক্তিটি কার্যকর হতে শুরু করে। তবে ওবামা প্রশাসনের স্বাক্ষরিত চুক্তিটি মানেন না ট্রাম্প। নির্বাচনি প্রচারণা চলার সময় ট্রাম্প বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে চীনের ‘ভুয়া প্রচারণা’ এবং প্যারিস চুক্তিকে ‘অন্যায্য’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে আনার জন্য ট্রাম্প পদক্ষেপ নেবেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটেই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নিজেদের একতার কতঅ জানিয়ে দিল ১৯০টিরও বেশি দেশ। সূত্র: বিবিসি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

/এফইউ/