পাকিস্তানের সেই বিধ্বস্ত বিমানের ৪৬ আরোহীর মরদেহ উদ্ধার

বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষদুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হওয়া পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের ওই বিমানটির কোনও আরোহী জীবিত নেই। এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (পিসিএএ) বরাত দিয়ে জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন।

বুধবার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ৪২ মিনিটে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের হাভেলিয়ান শহরের কাছে পিকে-৬৬১ ফ্লাইটটি বিধ্বস্ত হয়। পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর চিত্রল থেকে ইসলামাবাদের পথে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই বিমানটি নিখোঁজ হয়। প্রাথমিকভাবে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের তরফে ফ্লাইটটি নিখোঁজের কথা বলা হয়। পরে পুলিশ জানায়, বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে।

পিআইএ এবং পিসিএএ-এর বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়, বিমানের সকল আরোহী নিহত হয়েছেন। সেখানে কেউ জীবিত নেই।

পিআইএ-এর মুখপাত্র দানিয়াল গিলানি জানান, নিহতদের মধ্যে ৪২জন যাত্রী, ৫জন ক্রু এবং একজন প্রকৌশলী ছিলেন। আরোহীদের মধ্যে তিনজন বিদেশীও ছিলেন। এদের মধ্যে দুইজন অস্ট্রিয়ার আর একজন চীনের নাগরিক। এছাড়া বিমানটিতে ছিলেন পাকিস্তানের এক সময়ের জনপ্রিয় পপ তারকা জুনায়েদ জামশেদ।

পিসিএএ-এর তালিকা অনুসারে, বিমানটিতে যাত্রীদের মধ্যে ৩১ জন পুরুষ, ৯ জন নারী ও ২ শিশু ছিলেন।

অ্যাবোটাবাদের পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৪৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

পিআইএ এর চেয়ারম্যান আজম সেহগাল বলেছেন, ‘এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনা এবং কোনভাবেই নিজেদের দায় অস্বীকার করার চেষ্টা করবে না পিআইএ।’

আজম সেহগাল বলেন, ‘এই মুহূর্তে নিহতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে ঠিকঠাকভাবে হস্তান্তর করাই সবচেয়ে বড় কাজ।’

তবে দুর্ঘটনার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, বিমানটিতে ‘যান্ত্রিক গোলযোগের কোনো সুযোগ ছিল না।’ এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। 

উদ্ধার অভিযান

এদিকে, বুধবার ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে পিসিএএ-এর সচিব ইরফান ইলাহি সাংবাদিকদের জানান, এটিআর-৪২ টার্বোপ্রব বিমানটির ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল। তিনি বলেন, ‘এখনই নির্দিষ্ট করে কিছু বলা মুশকিল। তবে আমরা জানি যে, বিমানটির ইঞ্জিনে সমস্যা ছিল।’

বিমান বিধ্বস্ত হবার এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫ সালে একটি সামরিক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নরওয়ে, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশীয় রাষ্ট্রদূত এবং মালয়েশীয় ও ইন্দোনেশীয় রাষ্ট্রদূতের স্ত্রীসহ আট জনের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালে ভোজা এয়ারলাইনের বোয়িং ৭৩৭ বিমান ১২১ যাত্রী ও ৬ ক্রু নিয়ে অবতরণের পূর্ব মুহূর্তে বিধ্বস্ত হয়। সবচেয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে ২০১০ সালের জুলাই মাসে। ওই সময় বেসরকারি বিমান সংস্থা এয়ারলাইন এয়ার ব্লু-এর একটি বিমান ইসলামাবাদের একটি পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা ১৫২ জনের মৃত্যু হয়।

পাকিস্তানের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের বিমানও এর আগে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় পড়েছে। ১৯৯২ সালে পিআইএ-এর এয়ারবাস এ৩০০ কাঠমাণ্ডুতে বিধ্বস্ত হলে ১৬৭ জনের মৃত্যু হয়।

তারও আগে ১৯৬৫ সালে পিআইএ-র বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কায়রোতে ১২৪ জন, ১৯৭০ সালে ইসলামাবাদে ঝড়ের কবলে বিধ্বস্ত হয়ে ৩০ জন, ১৯৭২ সালে রাওয়ালপিণ্ডিতে ২৬ জন, ১৯৭৯ সালে পাকিস্তানি হাজিদের নিয়ে সৌদি আরবে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৫৬ জন, ১৯৮৬ সালে পেশাওয়ারে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়ে ৫৪ যাত্রীর ১৩ জন নিহত হন। এছাড়া ১৯৮৯ সালে গিলগিট থেকে ৫৪ জন আরোহী নিয়ে একটি বিমান নিখোঁজ হয়। বিমানটির কোনও ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়নি।

সূত্র: ডন।

/এসএ/