ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে কেরির ভাষণের নিন্দা জানালেন নেতানিয়াহু

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুমধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার প্রশ্নে দেওয়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির ভাষণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। কেরির ভাষণকে ইসরায়েলবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি।

বুধবার এক ভাষণে জন কেরি অভিযোগ করেন, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বসতি নির্মাণ চলমান থাকায় দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান ও মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া হুমকির মুখে রয়েছে। আর এজন্য ইসরায়েলকেই দায়ী করেন তিনি।

কেরির ভাষণের কয়েক মিনিট পরেই এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিন্দা জানিয়েছেন। 

নেতানিয়াহু বলেন, ‘ওই বক্তব্য ছিল ভারসাম্যহীন এবং মাত্রাতিরিক্তভাবে ইসরায়েলি বসতি কেন্দ্রিক।’ তিনি আরও বলেন, কেরি তার ভাষণে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী অভিযানের পক্ষে অবিরাম বলে গেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘সমস্যার মূলে রয়েছে ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলকে স্বীকৃতি না দেওয়া। আর তা দেখতে পাচ্ছেন না কেরি।’

গত ২৩ ডিসেম্বর (শুক্রবার) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বসতি নির্মাণকে অবৈধ ঘোষণা করে একটি প্রস্তাব পাশ করে। ১৫ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাশ হওয়া ওই প্রস্তাবে বলা হয়, ‘১৯৬৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েল যে বসতি স্থাপন করে যাচ্ছে, তার কোনও আইনি ভিত্তি নেই।’ নিরাপত্তা পরিষদের ১৪টি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলে তা পাশ হয়। ভোট দান থেকে বিরত থাকে যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে অতীতে তারা ইসরায়েলবিরোধী প্রস্তাবগুলোতে ভেটো দিত। ওই প্রস্তাব পাশের পর থেকে বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে তিক্ততা বাড়ে ইসরায়েলের। প্রস্তাবে ভেটো না দেওয়ায় নেতানিয়াহু ওবামা প্রশাসনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ করেন।  

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েল ফিলিস্তিনসহ অন্যান্য আরব রাষ্ট্রের একটা বড় অংশ দখল করে নেয়। পরে আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েলের সীমানা নির্ধারণ করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এই দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমানে পূর্ব জেরুজালেম, গাজা ও পশ্চিম তীরের অধিকৃত ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অন্তত ১৯৭টি সেটেলার বসতি রয়েছে, যেখানে বাস করছেন প্রায় ৬ লাখ ইসরায়েলি। ওইসব স্থান থেকে প্রায় ২৬ লাখ ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করা হয়। 

ডোনাল্ড ট্রাম্প

এদিকে, কেরির ভাষণের কিছু আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের সমর্থনে টুইট করেছেন। বুধবার এক টুইট বার্তায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করা পর্যন্ত ইসরায়েলকে ‘শক্ত থাকতে’ বলেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল একসময় ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও এখন আর নেই। ইসরায়েলকে ‘তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও অসম্মান’ করা হচ্ছে। এ অবস্থার অবসান হবে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাশ হওয়া ওই প্রস্তাবে ভোট গ্রহণের আগে ওবামা প্রশাসনের কাছে ‘ভেটো’ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকার ঘটনায় টুইটারে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘অবস্থা বদলাবে ২০ জানুয়ারির পর।’

নেতানিয়াহু তখন ট্রাম্পের প্রশংসা করে বলেছিলেন, তিনি নতুন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।

৭০ মিনিটের ওই ভাষণে কেরি বলেন, ‘ইসরায়েল যদি অধিকৃত ভূখণ্ডে তার বসতি নির্মাণ বন্ধ করে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে উদ্যোগী না হয়, তাহলে তারা আরব বিশ্বের সঙ্গে কখনও প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না।’ 

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি

দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য ইসরায়েলি বসতি নির্মাণকে ‘হুমকি’ বলে উল্লেখ করে কেরি বলেন, ‘বছরের পর বছর আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে। আমরা জনসমক্ষে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে বহুবার ইসরায়েলকে বসতি নির্মাণ বন্ধ করতে বলেছি।’

ভাষণে কেরি অভিযোগ করেন, ‘ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বসতি স্থাপনকারীদের এজেন্ডার ভিত্তিতে ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে চাইছেন।’

ওই ভাষণে কেরি জেরুজালেমকে ‘দুই রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত রাজধানী’ ঘোষণার জন্য একটি সমাধানেরও প্রস্তাবনা দিয়েছেন।

কেরি জানান, ‘যখন আমরা দেখছি শান্তির প্রত্যাশা ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে, তখন আমরা নিজেদের বিবেক বোধ এড়িয়ে চুপ করে বসে থাকতে পারি না।’     

তিনি আরও বলেন, ‘যখন আমরা দেখছি ইসরায়েলের সেটেলার বসতি নির্মাণের ফলে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানটাই ভেস্তে যেতে চলেছে, তখন আমরা বসে থাকতে পারি না। এর ফলে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যে ঘৃণা ও সহিংসতা গড়ে উঠছে, তা দেখেও আমরা অন্ধ সেজে থাকতে পারি না।’  

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।

/এসএ/বিএ/