দূতাবাস কর্মকর্তা শাহ মাসোত আন্ডারকভার রিপোর্টার রবিনকে বলেন, ‘আপনি কি কখনও এ ধরনের কোনও গ্রুপ তৈরি করেছেন?’ ব্রিটেনে নতুন একটি ইসরায়েলপন্থী গ্রুপ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েও কথা হয় তাদের। যে সংগঠনকে ভিন্ন আঙ্গিকে পৃষ্ঠপোষকতা দেবে ইসরায়েলি দূতাবাস।
ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে অবৈধ বসতি স্থাপন প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ব্রিটেনের ছাত্রনেতা, অ্যাক্টিভিস্ট এবং পার্লামেন্টারি গ্রুপগুলোকে আর্থিক সহায়তার টোপ দেওয়া হয়। জনসমর্থন আদায়ে কৌশলগত সহায়তার প্রলোভন দেখানো হয় তরুণ সংগঠকদের। থাকে ব্রিটিশ রাজনীতিতে একটা অবস্থান তৈরি করে দেওয়ার মতো লোভনীয় অফার।
রবিনের ছয় মাসের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলায় কিভাবে ব্রিটেনের সমাজের বিভিন্ন স্তরে কাজ করছে ইসরায়েলপন্থী গ্রুপগুলো। আর এ গ্রুপগুলোর সহযোগিতায় রয়েছে লন্ডনে নিযুক্ত ইসরায়েলি দূতাবাস। আর্থিক সহায়তা আসে যুক্তরাষ্ট্রে তৎপর ইসরায়েলপন্থী শক্তিশালী লবি আইপ্যাক থেকেও।
ইসরায়েলি দূতাবাসের কর্মকর্তা শাই মাসোত নিজেও একজন আন্ডারকভার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন। বিজনেস কার্ডে তার পরিচয় লেখা রয়েছে, লন্ডনে নিযুক্ত ইসরায়েলি দূতাবাসের জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক কর্মকর্তা। যুক্তরাজ্যে তার নেটওয়ার্কে রয়েছেন ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতিশীল একদল রাজনীতিক, অ্যক্টিভিস্ট ও বিশ্লেষক।
ফিলিস্তিনের ওপর থেকে ইসরাইলি দখলদারিত্ব অবসানে পরিচালিত এক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নাম বিডিএস। এর পূর্ণরূপ বয়কট, ডিভাস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাঙ্কশন্স অর্থাৎ, বয়কট, বিনিয়োগ প্রত্যাহার এবং নিষেধাজ্ঞা (বিডিএস)। দুনিয়াজুড়ে ইসরায়েলি পণ্য বর্জন, দেশটি থেকে পুঁজি প্রত্যাহার এবং ইসরায়েলি পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ সংক্রান্ত এ আন্দোলন ব্রিটেনে জনপ্রিয়তা পাওয়ায় শঙ্কিত হয়ে পড়ে ব্রিটেন। তার ওপর ব্রিটেনের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন ফিলিস্তিনিদের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক।
যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিডিএস আন্দোলনের প্রতি শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। ২০১৫ সালের জুনে ইসরায়েলকে বয়কট বা বর্জনের পক্ষে রায় দেয় ব্রিটেনের ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব স্টুডেন্টস (এনইউএস)। এর এক বছর পরই সংগঠনটি মালিয়া বোয়াতিয়া নামের একজন কালো মুসলিম নারীকে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। ব্যক্তিগতভাবে ফিলিস্তিনি জনগণের মানবাধিকারের প্রশ্নে সরব মালিয়া বোয়াতিয়া।
যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ৬৪টি ইহুদি সংগঠনের ফোরাম ইউনিয়ন অব জিউশ স্টুডেন্টস (ইউজেএস)। এ সংস্থাটি বিডিএস-কে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে।
ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব স্টুডেন্টস-এর বিরুদ্ধে চক্রান্ত
এজেন্ডা বাস্তবায়নে ইউনিয়ন অব জিউশ স্টুডেন্টস (ইউজেএস)-কে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে লন্ডনের ইসরায়েলি দূতাবাস। ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব স্টুডেন্টস-এর নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে ইউজেএস। এমনকি নির্বাচিত হওয়ার পরও মালিয়া বোয়াতিয়া-কে উৎখাতের চেষ্টা চালানো হয়। লন্ডনের ইসরায়েলি দূতাবাসের ঘনিষ্ঠ একজন অ্যাক্টিভিস্ট তরুণ পার্লামেন্টারি অফিসার মাইকেল রুবিন। আল জাজিরা’র আন্ডারকভার রিপোর্টারকে তিনি বলেন, মালিয়া বোয়াতিয়া-কে ‘আসলেই খারাপ’ এবং ‘ভয়ঙ্কর’।
মাইকেল রুবিন বলেন, আমরা মালিয়া বোয়াতিয়া-র প্রতিদ্বন্দ্বীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছি। কারণ আমরা তার বিজয় চাইনি।
ওই নির্বাচনের সময় লেবার পার্টির সমর্থক শিক্ষার্থীদের গ্রুপটির ইলেকশন চেয়ার-এর দায়িত্বে ছিলেন মালিয়া বোয়াতিয়া। এমনকি নির্বাচনি প্রচারণার সময় এনইউএস-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ব্রুকস গোপনে বৈঠক করেন মাইকেল রুবিন এবং ইহুদি শিক্ষার্থীদের সংগঠন ইউজেএস-এর ক্যাম্পেইন ডিরেক্টর রাসেল ল্যাঞ্জার-এর সঙ্গে। মালিয়া বোয়াতিয়া-কে উচ্ছেদ করা নিয়েও কথা হয় তাদের।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনবিরোধী ব্রিটিশ রাজনীতিকদের উৎখাতেরও পরিকল্পনার কথা উঠে এসেছে এ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। উৎখাত প্রচেষ্টার সম্ভাব্য হুমকির মুখে ছিলেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যালান ডানকান-সহ ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতিশীল এমপিরা। সূত্র: আল জাজিরা।
/এমপি/