যুক্তরাষ্ট্রে কিউবানদের জন্য 'ওয়েট ফুট, ড্রাই ফুট' নীতির অবসান

সাম্প্রতিক সময়ে কিউবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বদলাচ্ছেভিসা ছাড়া প্রবেশকারী কিউবানদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে নীতিমালা প্রচলিত রয়েছে তার অবসান ঘোষণা করলেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। আর এর বিনিময়ে, হাভানাও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত কিউবানদের গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে কিউবা। এদিকে মার্কিন প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কিউবানদের অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
১৯৬০-এর দশকের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র-কিউবার মধ্যে সম্পর্ক শীতল হতে থাকে। এরপর প্রায় পাঁচ দশক ধরে দুই দেশের কূটনৈতিক যোগাযোগ বন্ধ ছিল। এ কারণে পারস্পরিক বাণিজ্যিক সম্পর্কও নষ্ট হয়। পরে কিউবার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে মনোযোগী হয় ওবামা প্রশাসন। বিশেষ করে ২০১৪ সাল থেকে সম্পর্কোন্নয়নের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আর তারই অংশ হিসেবে এবার বিতর্কিত ‘ওয়েট ফুট, ড্রাই ফুট’ নীতি বিলুপ্ত করার ঘোষণা দিলো ওবামা প্রশাসন।
বারাক ওবামা বলেন, ‘এ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে, আমরা আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই অন্য দেশের অভিবাসীদের মতো করেই কিউবানদের গ্রহণ করতে পারব।’ এদিকে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে কিউবার সরকার এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে এটিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০ বছরের ওই পুরনো নীতির আওতায় এতোদিন যেসব কিউবান অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতেন তাদেরকে এক বছর পর আইনিভাবে স্থায়ী বাসিন্দা করা হতো। দশকের পর দশক ধরে কিউবানদের প্রতি ওয়াশিংটনের যে নীতিমালা সেক্ষেত্রে দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে। তাহল- ক্যারট এবং স্টিক। এর মধ্যে স্টিক হলো, কিউবার ওপর যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ। কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া তা বাদ দেওয়া যায় না। কিন্তু ক্যারট নীতিটি একটি বিশেষ অভিবাসন অধিকার যা কেবল কিউবানদের সামনেই দোলায়মান থাকে। অন্য দেশের অভিবাসীরা এ সুযোগ পান না। এ নীতিটি হলো ‘ওয়েট ফুট, ড্রাই ফুট’।




কয়েক দশক ধরে ওয়েট ফুট ড্রাই ফুট নীতি প্রচলিত
ওই নীতির আওতায় যেসব কিউবান একবার যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে শুকনো পদক্ষেপ ফেলতে পারেন তবে তার ভিসা না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে পারেন। এবং তিনি নাগরিকত্বের আবেদনও করতে পারেন। আবার সাগরপথে পাড়ি দেওয়ার সময় কিউবানদের যদি যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড শনাক্ত করে ফেলে এবং তাদের গতিরোধ করে তবে সেসকল কিউবান ওই সুবিধা পায় না। দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত এ নীতির সমালোচনা করে আসছিল কিউবার সরকার। তাদের অভিযোগ, এ নীতির মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিউবানদের মগজ ধোলাইয়ের চেষ্টা করছে এবং হাজার হাজার মানুষকে প্রতিবছর ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করছে। ল্যাটিন-আমেরিকান লবি গ্রুপগুলোও এর বিরোধিতা করে। তাদের অভিযোগ, এ নীতির কারণে কিউবানরা অভিবাসনের দিক দিয়ে অন্য ল্যাটিনোদের চেয়ে বেশি সুবিধা পান।

/এফইউ/