চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের নানা ভুল পদক্ষেপ, চীনা মুদ্রার মূল্যামান কিংবা অর্থনৈতিক সমীকরণের মতো বিষয়গুলোতে এমন অনিশ্চয়তাপূর্ণ অবস্থান দেখা যেতে পারে ট্রাম্প প্রশাসনের। অর্থাৎ, এ ধরনের বিভিন্ন ইস্যুতে তার অবস্থান সম্পর্কে একটা আগাম ধারণা পাওয়াটা বেশ কঠিন হবে।
মাইকেল পিলসবারি’র মতে, কৌশলগত সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবেই বারবার বেইজিং-এর বিষয়ে নাক গলাবে ট্রাম্প প্রশাসন। চীনের কাছ থেকে জোরপূর্বক অর্থনৈতিক ছাড় আদায়ের চেষ্টা করা হবে।
২০১৬ সালের ৮ নভেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেন ২০ জানুয়ারি। তবে শপথ গ্রহণের আগেই চীনের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন ট্রাম্প। বেইজিং-কে উদ্দেশ্য করে দিয়েছেন আক্রমণাত্মক বক্তব্য।
নির্বাচিত হওয়ার পর রীতি ভেঙে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় এক চীন নীতি পুনর্বিবেচনার কথাও বলেন ট্রাম্প। এ নিয়ে তখন কঠোর প্রতিক্রিয়া জানায় চীন। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়েও হুমকি দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি শন স্পাইসার বলেছেন, চীন যদি আন্তর্জাতিক পানিসীমায় দ্বীপ নির্মাণের কাজ শুরু করে, আর ওই অঞ্চল যদি চীনের অংশ না হয়; তাহলে একটি দেশের হাত থেকে আন্তর্জাতিক এলাকা রক্ষা করতে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করবে।
শন স্পাইসারের ওই বক্তব্যের পর ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ‘বিতর্কিত’ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমরা ‘এক চীন নীতি’র ভিত্তিতে ও পরস্পরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের প্রতি আস্থা রেখেই নতুন মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী।”
সামগ্রিক বিবেচনায় ট্রাম্পকে চীনের প্রতি আক্রমণাত্মক হিসেবেই বিবেচনা করছেন অনেকে। যদিও কারও কারও ধারণা ছিল, দায়িত্ব নেওয়ার পর বাস্তববাদী হয়ে উঠবেন ট্রাম্প। তখন চীনের বিরুদ্ধে তার হুংকার সেভাবে কার্যকর হবে না।
চীন সরকারের আন্তর্জাতিক সম্প্রচার মাধ্যম সিসিটিভি-র সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন সাবেক পেন্টাগন কর্মকর্তা মাইকেল পিলসবারি। তিনি বলেন, “ট্রাম্পের বিশ্বাস, সংলাপ বা আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে কোনও বিষয় মীমাংসা করতে চীনারা দুনিয়ার সবচেয়ে পারদর্শী জাতি। ফলে চীনের কাছ থেকে সুবিধা নিতে হলে দেশটির সরকারের কাছে তাকে একজন অনিশ্চয়তাপূর্ণ ব্যক্তি হয়েই থাকতে হবে। আমার কাছে মনে হচ্ছে তিনি এতে সফল হয়েছেন। আপনার কাছেও কি এমনটা মনে হচ্ছে না?”
মাইকেল পিলসবারি নিজে চীনা ভাষা মান্দারিনে যথেষ্ট পারদর্শী। এ ভাষায় তিনি অনর্গল কথা বলতে পারেন। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে তার। টিম ট্রাম্পেরও তিনি একজন উপদেষ্টা। প্রেসিডেন্ট তার সাম্প্রতিক বই ‘গ্রেট অ্যাগেইন: হাউ টু ফিক্স আওয়ার ক্রিপলড আমেরিকা’ বইতে তার কর্মযজ্ঞের রূপরেখা তুলে ধরেছেন।’
বইটিতে ট্রাম্প লিখেছেন, "অবাক হওয়ার মতো বিষয়গুলোই কাউকে লড়াইয়ে জয়ী করে। তাই আমি কি করছি সেটা অন্য পক্ষকে বলছি না। আমি তাদের সতর্ক করি না। একটা সম্ভাব্য ধারণার ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত হতে দেই না ... আমি অনির্দেশ্য (আনপ্রেডিকটেবল) হতেই পছন্দ করি। এতে তারা ভারসাম্যহীনতায় থাকবে।" পেন্টাগনের সাবেক কর্মকর্তা মাইকেল পিলসবারি-র মতে, চীনের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের বইয়ের এই বাক্যগুলোই প্রযোজ্য। আসলে তিনি কি করবেন, সে সম্পর্কে বেইজিংকে আগেই কিছু আঁচ করার সুযোগ দেবেন না এই ব্যবসায়ী-রাজনীতিক। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।
/এমপি/