ইরান ইস্যুতে কঠোর হতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে চাপ দেবে ইসরায়েল

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুইরান ইস্যুতে যুক্তরাজ্যকে আরও কঠোর হতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-এর ওপর চাপ প্রয়োগ করবেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ডাউনিং স্ট্রিটে দুই সরকারপ্রধানের আসন্ন বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। সেখানে ইরান ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন আরও কঠোর অবস্থান নেয়; সে ব্যাপারে থেরেমা মে-এর প্রতি আহ্বান জানাবেন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলি সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহু-র সাক্ষাতের আগেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হবে জানা গেছে।

রবিবার ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় এ বিষয়ে কথা বলেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ সময় তিনি বলেন, তার সরকার ইরান ইস্যুকে কূটনৈতিক অগ্রাধিকার হিসেবে দেখছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবান্ধব ট্রাম্প প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণকে মার্কিন মুলুকে নিজ দেশের জন্য একধাপ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করছে তেল আবিব। এর ফলে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর পরমাণু চুক্তির জোরালো বিরোধিতার একটা  ক্ষেত্র তৈরি হলো। অর্থাৎ, ইরান ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলের জন্য একটা  সুবর্ণ সুযোগ।

থেরেসা মে-এর নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ প্রশাসন থেকে অবশ্য ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নতুন করে ইসরায়েলি বসতি বিস্তার নিয়ে এরইমধ্যে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। এ ইস্যুতে গত সপ্তাহেই ঘনিষ্ঠ মিত্র ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকেও মৃদু ভর্ৎসনার শিকার হতে হয়েছে।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নতুন করে ইসরায়েলি বসতি বিস্তার নিয়ে গত সপ্তাহেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন লন্ডনের ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট-এর একজন মুখপাত্র। এ সময় তিনি বলেন, “আশা করি প্রধানমন্ত্রী (ইসরায়েলের) সরকারের অবস্থান ঠিক করবেন। তবে আমরা মনে করি, অব্যাহতভাবে বসতি বিস্তার আস্থার সংকট তৈরি করবে।”

ব্রিটেনের লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন-এর ভাষা অবশ্য এতোটা নমনীয় ছিল না। তিনি বলেছেন, এভাবে ইসরায়েলি বসতি বিস্তার দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে ব্যাহত করবে।

জেরেমি করবিন-এর ভাষায়, “পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে তিন হাজার নতুন বসতি স্থাপনে ইসরায়েল সরকারের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবৈধ। এটা শান্তি ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি।”

‘ইসরায়েলের প্রতি অনেকের সমর্থন থাকলেও ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায্য অধিকারের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের দ্ব্যর্থহীন সমর্থনের’ কথা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে জানানোরও আহ্বান জানান করবিন।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি বিস্তারের বিপক্ষে ভোট দেয় যুক্তরাজ্য। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ওই সময়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-এর সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেন নেতানিয়াহু। সুইজারল্যান্ডের ডাবোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ওই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।

এদিকে রবিবার রাতে ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ ফক্স নিউজ-কে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এতে তিনি বলেন, আমেরিকাকে মোটেই ভ্রুক্ষেপ করে না ইরান। তাদের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতায় স্বাক্ষর যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লজ্জা বয়ে এনেছে। এটি অর্জনের জন্য আলোচনায় বসাই উচিত হয়নি।

ট্রাম্প বলেন, তেহরানের সঙ্গে ছয় জাতিগোষ্ঠীর স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতার চেয়ে খারাপ চুক্তি তিনি আর কখনও দেখেননি। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি।

/এমপি/