রোহিঙ্গা নিপীড়ন: পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে নামছে মিয়ানমার সরকার

মিয়ানমারের পুলিশরোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমারের পুলিশ যৌন নিপীড়ন চালিয়েছে কিনা তা নিয়ে তদন্তে নামতে যাচ্ছে দেশটির সরকার। মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) খবরটি জানিয়েছে। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলে মিয়ানমারে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর এ ঘোষণা দেওয়া হলো।

এ বছর অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর তার দায় চাপানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। আর তখন থেকেই শুরু হয় নিরাপত্তা বাহিনীর দমন প্রক্রিয়া। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি, এরপর থেকেই রাখাইন রাজ্যে 'ক্লিয়ারেন্স অপারেশন' চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। রোহিঙ্গা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চালানোর সময় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যৌন নিপীড়ন চালিয়েছে। চলতি মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয় থেকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী গণহত্যা ও সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ চালিয়েছে, তাদের ঘর-বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এ ধরনের ঘটনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল এবং জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করে জাতিসংঘ। তবে উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে যতগুলো নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে তার প্রায় সবই নাকচ করে দিয়েছে মিয়ানমার সরকার।
গত সপ্তাহে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী জানায়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা তদন্তের জন্য একটি দল গড়ে তোলা হচ্ছে। আর সোমবার, এক বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চলার সময় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ অন্য কোনও অবৈধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত করেছে কিনা তা জানতে একটি ‘বিভাগীয় তদন্ত’ চালানো হবে।

পুলিশ কর্মকর্তা মিয়ো থু সোয়ে সোমবার রয়টার্সকে বলেন, ‘যেসব ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠৈছে তা জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর তাই ওই প্রতিবেদনে উল্লিখিত অভিযোগের প্রমাণ খুঁজতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

এদিকে অনলাইনে একটি ভিডিও প্রকাশের পর আলাদা করে ৫ পুলিশ সদস্যকে দুই মাস আটক রাখার সাজা দেওয়া হয়েছে। ওই ভিডিওতেক দেখা গেছে রাখাইন রাজ্যে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এক অভিযানের সময় ওই পুলিশ সদস্যরা মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে। আর একই মামলায় অভিযুক্ত আরও তিন পুলিশ সদস্যের পদাবনতি করা হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, মিয়ানমারে কোনও নিপীড়নের অভিযোগে দেশটির সেনাবাহিনীকে দায়ী করা কিংবা স্বচ্ছভাবে এসব ঘটনার তদন্ত করার ঘটনা বিরল।

দীর্ঘদিন ধরে সাম্প্রদায়িক তিক্ততা চলে আসছে রাখাইন বৌদ্ধ ও রাজ্যটিতে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে। দেশটিতে প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়, এমনকি দেশটির সরকার তাদের প্রাচীন নৃগোষ্ঠী হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়নি। মিয়ানমারের জাতীয়তাবাদীরা জোর দিয়ে বলে আসছে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী। তারা রোহিঙ্গাদের ‘রোহিঙ্গা’ না বলে ‘বাঙালি’ বলে থাকে। তিক্ততার ফলে ২০১২ সালে রাখাইনে ভয়াবহ মুসলিমবিরোধী সহিংসতা সংঘটিত হয়। ১ লাখের ও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়। 

দেশটিতে অব্যাহত রোহিঙ্গা নির্যাতন ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে’র শামিল বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা। সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করতে মিয়ানমার সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।

/এফইউ/