পাকিস্তানে মাজারে হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস

আমাকের ওয়েবসাইটে দায় স্বীকার করে আইএসপাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের একটি সুফি মাজারে ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনাটির দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। মাজারে হামলার দায় স্বীকারের বিষয়টি আইএস স্বীকৃত বার্তা সংস্থা আমাক-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারেও প্রকাশ করা হয়।

করাচির ২০০ কিলোমিটার উত্তরে সিন্ধু প্রদেশের শেহওয়ান এলাকার লাল শাহবাজ কালান্দার নামের সুফি মাজারটিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত দেড়শ’ জন। এটি দেশটিতে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে মারাত্মক বোমা হামলার ঘটনা। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এরই মধ্যে এ ঘটনার জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করে প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।

রয়টার্স জানায়, ওই বর্বরোচিত ঘটনার পরপরই আইএস-এর স্বীকৃত মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট আমাক-এ আরবি ভাষায় ওই ঘটনার দায় স্বীকার করা হয়, যদিও গণমাধ্যমে বিষয়টি পরে উঠে আসে। আমাক-এর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএস এ ঘটনায় উল্লেখ করে তাদের একজন সৈনিক শহীদ হয়েছে। তবে ওই সৈনিক এ ঘটনাটি ঘটিয়ে মৃত্যুবরণ করায় তার প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছে চরমপন্থী সংগঠনটি। যদিও আমাক-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটির ব্যাপারে পাকিস্তানের প্রশাসন বা রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনও মন্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার এ হামলায় নিহতদের সংখ্যা এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এবং রয়টার্সের মতে, এখন পর্যন্ত ৭০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। তবে ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার দাবি, নিহতের সংখ্যা প্রায় ১০০।

ধারণা করা হচ্ছে, মাজারে সমবেত নারীদের অংশকেই মূলত লক্ষ্য বানাতে চেয়েছে হামলাকারী। এ কারণে মায়েদের সঙ্গে থাকা প্রায় ৩০টি নিরপরাধ শিশু এ হামলার শিকার হয়ে নির্মমভাবে মারা গেছে।
এদিকে স্থানীয় হাসপাতাল থেকে পাকিস্তান পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শাব্বির সেথার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে টেলিফোনে নিশ্চিত করে বলেন, অন্তত ৭২ জন নিহত ও ১৫০ জন আহত হয়েছেন। মৃতদের তালিকা ক্রমেই বাড়ছে।

আমাকের ওয়েবসাইটে দায় স্বীকার করে আইএসটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, মাজার থেকে আহতদের অ্যাম্বুলেন্স ও সামরিক হেলিকপ্টারের মাধ্যমে স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অনেকে প্রাইভেট কারেও আহতদের হাসপাতালে পৌঁছে দেন। ঘটনার পরপরই মাজারের সামনে অবস্থান নেয় পাক সেনাবাহিনী।

পাকিস্তানে শতাব্দী ধরে সুফিবাদ চর্চা হয়ে আসছে। লাল শাহবাজ কালান্দার হলো দেশটির সবচেয়ে সম্মানিত সুফি মাজার। বৃহস্পতিবার ছিল স্থানীয় সুফিদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন। মাজারে ব্যাপক লোক সমাগম হওয়ার পর বোমা হামলা ঘটানো হয়। ডন নিউজ টেলিভিশন চ্যানেলকে এক নারী আর্তনাদের স্বরে বলেন,‘আল্লাহর ইবাদতের জন্য আমরা মাজারে এসেছিলাম। প্রার্থনা করার সময় কেউ হামলা চালাবে কে ভেবেছিল?’

পাকিস্তানে আইএস-এর ব্যাপ্তি স্বল্প হলেও লক্ষণীয়ভাবে ক্রমান্বয়ে দেশটিতে জঙ্গির সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গত বছরের আগস্টে কুয়েটা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি হাসপাতালে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৭৪ জন নিহত হন। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন আইনজীবী। এরপর নভেম্বরে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি মুসলিম প্রার্থনালয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ৫২ জনের মৃত্যু হলে দায় স্বীকার করে আইএস। গত সপ্তাহে লাহোরের পূর্বাঞ্চলীয় শহরে বোমা হামলা চালায় জামাত-উর-আহরার। এ ঘটনায় নিহত হন ১৩ জন। বৃহস্পতিবার দেরা ইসমাইল খান শহরে আরেকটি ঘটনায় মোটরসাইকেলে চড়ে এক বন্দুকধারী তিন পুলিশ সদস্য ও এক সাধারণ নাগরিককে হত্যা করে।

/জেএইচ/টিএন/