আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য

বহুভাষায় শিক্ষার মাধ্যমে টেকসই ভবিষ্যৎ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসএবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘বহুভাষায় শিক্ষার মাধ্যমে টেকসই ভবিষ্যৎ’। ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ইউনাইটেড ন্যাশনস এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন (ইউনেস্কো)-এর মহাপরিচালক ইরিনা বকোভা বলেছেন, ‘সর্বত্র বহুভাষায় শিক্ষার গ্রহণযোগ্যতা দিতে হবে।’
বিবৃতিতে ইরিনা আরও বলেন, ‘শিক্ষা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক প্রকাশ, সংবাদমাধ্যম, সাইবার জগৎ এবং বাণিজ্য, সর্বক্ষেত্রে বহুভাষার চর্চা জরুরি।’  
এবারের প্রতিপাদ্যে টেকসই উন্নয়নের জন্য মাতৃভাষাসহ অন্যান্য ভাষা শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তবে পড়া, লেখা বা নম্বর শেখার ক্ষেত্রেও স্থানীয় বা মাতৃভাষা অগ্রাধিকার পাবে। বিশেষত সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের ক্ষেত্রে সংস্কৃতি, নৈতিকতা এবং রীতিনীতি আদান-প্রদানে স্থানীয় ভাষার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
বহুভাষিক শিক্ষা সম্পর্কে জাতিসংঘ বলছে, যখন সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের ভাষাকে সমান মান্যতা দেওয়া হয়, তখন বহুভাষায় শিক্ষা বিশেষ গুরুত্ব পায়।
এর ফলে জানাবোঝা ও সৃজনশীলতাকে কেন্দ্র করে মানসম্মত শিক্ষা পদ্ধতি গড়ে উঠে। মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে নয়, বরং তাকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের দিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছে জাতিসংঘ। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে বহুভাষিক শিক্ষার মধ্য দিয়ে এক নতুন মাত্রার যোগাযোগ গড়ে উঠতে পারে।
জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের বস্তুগত এবং ধারণাগত ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী উপকরণ হলো ভাষা। 

এই নতুন ভাষা শিক্ষার মধ্য দিয়ে সমাজে বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ এবং নতুন জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বহির্প্রকাশ ঘটে। আর এর ফলে বৈশ্বিক ও স্থানীয় পর্যায়ে পারস্পরিক সৌহার্হ্যপূর্ণ অবস্থান গড়ে উঠে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে ইউনেস্কোর সাধারণ সভায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ঘোষণা দেওয়া হয়।

ভাষাবিদ্যা, ভাষার বহুত্ব এবং সাংস্কৃতিক বহুমুখিতাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রতিবছর ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন করা হচ্ছে। ওই তারিখটি ১৯৫২ সালের সেই দিনটিকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যখন তৎকালীন পাকিস্তানে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো হয়। সেদিন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় পুলিশের গুলিতে হতাহত হন অনেকে।

২০০৭ সালের ১৬ মে তারিখে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় এ/আরইএস/৬১/২৬৬ নম্বর নথি অনুসারে, সকল সদস্য দেশের উদ্দেশে বলা হয়, ‘বিশ্বের সকল ভাষার সংরক্ষণ এবং সুরক্ষার বিষয়টি’ প্রচার করতে বলা হয়। একই নথিতে ভাষাসমূহের মধ্যে বহুভাষা এবং বহুসংস্কৃতির মধ্যে বহুমুখিতার ঐক্যবদ্ধতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে, ২০০৮ সালকে ‘ভাষাসমূহের আন্তর্জাতিক বছর’ বলে ঘোষণা করা হয়।

সূত্র: ইউনেস্কো ওয়েবসাইট।

/এসএ/