সন্ত্রাসী হামলার হুমকির কারণেই ইলেকট্রনিক পণ্য বহনে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

তালিকায় রয়েছে ১০টি বিমানবন্দরউত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের আটটি মুসলিম দেশের ১০টি বিমানবন্দর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী বিমানে ইলেকট্রনিক ডিভাইস বহনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলো সন্ত্রাসীদের আক্রমণের লক্ষ্যে পরিণত হওয়ার কারণেই বিশেষ এই সতর্কতা গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার (২১ মার্চ) দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি তাদের ওয়েবসাইটে এ নিষেধাজ্ঞার তথ্য প্রকাশ করে।

মার্কিন সরকার কেন এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং সুনির্দিষ্ট কোনও সন্ত্রাসী হামলার হুমকি বা পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘২০১৫ সালে মিশরে বিমানে হামলা, ২০১৬ সালে সোমালিয়ায় বিমানে হামলার চেষ্টা এবং একই বছরে ব্রাসেলস ও ইস্তানবুলে বিমানবন্দরে সশস্ত্র হামলা হয়েছে। এছাড়াও, সাম্প্রতিক সময়ে বিমানবন্দরগুলোকে নিজেদের আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে হামলাকারীরা। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এসব বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন। পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের মাধ্যমে বিস্ফোরক পাচারের জন্য বাণিজ্যিক ফ্লাইটগুলোকেই বেছে নিতে থাকবে। আর এসব প্রবণতার প্রেক্ষিতেই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে পরিবহন নিরাপত্তা প্রশাসন (টিএসএ) নিরাপত্তা জোরদারের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরটি জানিয়েছে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বিমানবন্দরগুলোকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে থাকবে বলে নিশ্চিত হওয়ার মতো তথ্য রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। ভবিষ্যতে সন্ত্রাসীদের হুমকি ও পরিকল্পনার ধরণের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তালিকায় থাকা বিমানবন্দরগুলোর নামও বদলে যেতে পারে।
পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী ফ্লাইটের যাত্রীদের জন্য জারি করা এই নির্দেশনা বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিষয়ক ওই মন্ত্রণালয়।

নতুন আরোপিত এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আটটি মুসলিম দেশের ১০টি বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী ফ্লাইটগুলোতে যাত্রীরা ট্যাবলেট পিসি, পোর্টেবল ডিভিডি প্লেয়ার, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, ই-বুক রিডার, ট্রাভেল প্রিন্টার, স্ক্যানারসহ স্মার্টফোনের চেয়ে বড় কোনও ইলেকট্রনিক ডিভাইসই বহন করতে পারবেন না। এসব ফ্লাইটের যাত্রীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও পণ্য বহনের ক্ষেত্রেও আগে থেকেই তা অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে।
নতুন নিয়মের আওতায় থাকা বিমানবন্দরগুলো হলো— মিসরের কায়রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট ও আবু ধাবি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, তুরস্কের আতাতুর্ক ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, কাতারের হামাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, জর্ডানের কুইন আলিয়া ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, কুয়েতের কুয়েত ইন্টারন্যাশাল এয়ারপোর্ট, মরক্কোর পঞ্চম মোহাম্মদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এবং সৌদি আরবের কিং আবদুল আজিজ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট ও কিং খালিদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট।
মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ জানিয়েছে, ওইসব বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে আসা ফ্লাইটের যাত্রীরা একটি সেলফোনের চেয়ে বড় কোনও ডিভাইস নিজেদের সঙ্গে বহন করতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত, এ বছরের ২০ জানুয়ারি নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের এক সপ্তাহ পরই ২৭ জানুয়ারি এক নির্বাহী আদেশে সাত মুসলিমপ্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র সফরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশগুলো হলো— ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেন। সিয়াটলের একজন বিচারক ট্রাম্পের ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিতের আদেশ দেন। ট্রাম্প প্রশাসন ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলেও সানফ্রান্সিসকোভিত্তিক তিন বিচারকের প্যানেল তা খারিজ করেন। এরপর সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের ওপর স্থগিত হয়ে যাওয়া নিষেধাজ্ঞা সংশোধন করে ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। নতুন জারি করা নিষেধাজ্ঞায় আগের তালিকায় থাকা ইরাককে বাদ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন-

১০ মুসলিম দেশের ফ্লাইটে ল্যাপটপ বহনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা

সৌদি আরবসহ ৮ মুসলিম দেশের বিমানে নতুন নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের!

/এমএ/টিআর/