ইরাকে মার্কিন অভিযানে বেসামরিক হত্যার তদন্তের ঘোষণা

nonameইরাকের মসুলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিমান হামলায় দুই শতাধিক মানুষকে হত্যার তদন্ত করবে যুক্তরাষ্ট্র। ইরাকে নিযুক্ত মার্কিন বাহিনীর একজন কমান্ডারের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। এদিকে, মার্কিন বাহিনীর হাতে বেসামরিক নাগরিকদের এমন হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় জঙ্গিদের দায়ী করেছে ইরাকি বাহিনী।

যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি চিফ অব স্টাফ জেনারেল মার্ক মিলি বলেছেন, যেখানে হত্যাযজ্ঞের কথা বলা হচ্ছে ওই এলাকায় মার্কিন বাহিনী সেদিন এবং এর আগেও বিমান হামলা চালিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার কারণেই এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে-এমনটা নিশ্চিত নয়। 

জেনারেল মার্ক মিলি বলেন, এটা খুবই সম্ভব যে, মার্কিন বাহিনীর ওপর দায় চাপাতে দায়েশ (আইএস) ভবনটি উড়িয়ে দিয়েছে। যৌথবাহিনীর হামলার ফলেও এটা হতে পারে। এ ব্যাপারে এখনও আমাদের জানা নেই। ঘটনাস্থলে তদন্তকারীরা রয়েছেন।

লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, মার্কিন বাহিনীর  চালানো ওই হত্যাযজ্ঞে নিহতের সংখ্যা ২৪০ ছাড়িয়েছে। এর আগে জাতিসংঘ ও ইরাক ছাড়াও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এ ধরনের হামলার ব্যাপক সমালোচনার মুখে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইএস জঙ্গি এবং তাদের অস্ত্রসামগ্রী লক্ষ্য করে ইরাকে যৌথবাহিনীর বিমান থেকে এ হামলা চালানো হয়। এতে ২০০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। যে স্থানটিতে বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির অভিযোগ উঠেছে, সেটি বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তুর সঙ্গে সামঞ্চস্যপূর্ণ।

ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এই মসুল। চলতি মাস থেকে সেখানে মার্কিন বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় আইএসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে ইরাকি বাহিনী।

noname

ইরাকি সেনাবাহিনীর দাবি, আইএস জঙ্গিরা বিস্ফোরক নিয়ে দড়ি বেঁধে একটি ভবনের ছাদে উঠে পড়ায় বেসামরিক নাগরিকরা হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে ইরাকি বাহিনীর এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। তারা বলছেন, মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলায় ভবনটি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়ে। এতে ভবনের ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে নিহত হন সেখানে বসবাসরত পরিবারগুলোর অনেক সদস্য।

এ হামলাকে ‘মানবিক বিপর্যয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ইরাকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওসামা নুজাইফি। পুরো ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। ইরাকে নিযুক্ত জাতিসংঘের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, মসুলে ভয়াবহ বিমান হামলায় শতাধিক বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানির ঘটনায় তিনি বিস্মিত।

২০০৩ সালের ১ মে ইরাক দখল করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে মার্কিন বাহিনীর হামলায় বেসামরিক হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে বড় ঘটনাগুলোর একটি। ১৭ মার্চের ওই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দাল আল এবাদি এবং দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি চিফ অব স্টাফ জেনারেল মার্ক মিলি। তাদের সঙ্গে কথা বলার পরই এ বিষয়ে তদন্তের ঘোষণা দেন তিনি।

এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বাহিনীর কাছে মানুষের জীবনের মূল্য আছে। এজন্যই জঙ্গিদের কবল থেকে ইরাককে মুক্ত করতে দেশটির সরকারি বাহিনীকে সহায়তা করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সূত্র: রয়টার্স, সিএনএন, দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট।

/এমপি/