বিশ্বজুড়ে মাদার অব অল এক্সপ্লয়েটস ছুড়ছে যুক্তরাষ্ট্র: স্নোডেন

nonameবিশ্বের ব্যাংক ব্যবস্থায় মার্কিন নজরদারির তথ্য ফাঁস হওয়ার ঘটনাকে স্বাগত জানিয়েছেন সাবেক আলোচিত মার্কিন গোয়েন্দা এডওয়ার্ড স্নোডেন। শ্যাডো ব্রোকারস নামের এক অনলাইন গ্রুপের ফাঁস হওয়া নথিতে মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকায় এ ধরনের মার্কিন নজরদারির আভাস মিলেছে। ওই সব নথি  বিশ্লেষণ করে সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ম্যালওয়ার ব্যবহারের মাধ্যমে সুইফট সিস্টেম হ্যাক করে বিশ্বজুড়ে ব্যাংক ব্যবস্থায় নজরদারিতে সক্ষম যুক্তরাষ্ট্র। ওই ম্যালওয়ারকে মার্কিন বাহিনীর আফগানিস্তানের তোরাবোরায় নিক্ষেপ করা সবচেয়ে ভয়ংকর অপারমাণবিক বোমার সঙ্গে মিল রেখে ‘মাদার অব অল এক্সপ্লয়েটস’ বলে উল্লেখ করেছেন সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা এডওয়ার্ড স্নোডেন।

২০১৬ সালে আত্মপ্রকাশ করা শ্যাডো ব্রোকারস একটি হ্যাকিং গ্রুপ। তারা জেমস বামফোর্ড, ম্যাট সুইশের মতো সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, তারা একটি ‘হুইসেল ব্লোয়ার গ্রুপ’, এনএসএ-র ভেতরেও তাদের সহযোগী রয়েছে, যাদের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন গোপন তথ্য ফাঁস করেছে।  ফাঁস হওয়া কয়েকটি নথিতে এনএসএ-র সীল দেখা যায়। ওই নথিগুলো সঠিক হলে, তা হবে ২০১৩ সালে এনএসএ সম্পর্কে সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা নথির পর সবচেয়ে বড় তথ্য ফাঁসের ঘটনা।

স্নোডেন এই নথি ফাঁসকে স্বাগত জানিয়েছেন। আফগানিস্তানে নিক্ষেপ করা বিশ্বের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অপারমাণবিক বোমা ‘মাদার অব অল বোম্বস’-এর সঙ্গে মিলিয়ে তিনি এনএসএ-র এই হ্যাকিং কর্মকাণ্ডকে ‘মাদার অব অল এক্সপ্লয়েটস’ (সব নিপীড়নের মূল) বলে উল্লেখ করেছেন।

বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের পাকিস্তান সীমান্তবর্তী প্রদেশ নানগড়হরে একটি মার্কিন বিমান থেকে ওমওএবি নামের বিশ্বের সবচেয়ে বড় অপারমাণবিক মার্কিন বোমা ফেলা হয়। এমওএবি-র মানে হলো ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স ওয়ার ব্লাস্ট, বাংলায় বলা যেতে পারে ব্যাপক বিধ্বংসী বায়ু-বিস্ফোরক। তবে এমওএবি-কে বিস্তৃত করলে মাদার অব অল বম্বস-ও হয়। মার্কিন সেনাবাহিনী এই নামেই ডাকে বোমাটিকে। পরমাণু বোমার বাইরে এটিই পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়া সবথেকে বড় বোমা।

এক টুইটারবার্তায় স্নোডেন এনএসএ-র তৈরি ম্যালওয়ারের সঙ্গে সেই বোমার সাদৃশ্য নির্দেশ করে বলেন, ‘এনএসএ ল্যাবরেটরি থেকে ছোড়া মাদার অব অল এক্সপ্লয়েটস এখন ইন্টারনেটে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।’ অপর এক টুইটবার্তায় তিনি উইন্ডোজ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য মাইক্রোসফটকে এনএসএ-র বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে মার্কিন টেক-জায়ান্ট মাইক্রোসফট জানিয়েছে, মার্কিন সরকার বা অন্য কোনও সংস্থা থেকে এমন কোনও ফাইলের অস্তিত্ব, বা কোনও ফাইল চুরি হওয়ার বিষয়ে তাদের জানানো হয়নি। উল্লেখ্য, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে এমন একটি ব্যবস্থা করা হয়, যেখানে কোনও হ্যাকিংয়ের বিষয়ে সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবগত করা হয়।

উল্লেখ্য, এডওয়ার্ড স্নোডেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনএসএ-র সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। ২০১৩ সালে গোপন নজরদারির বিভিন্ন তথ্য ফাঁস করে সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন স্নোডেন। এরপর থেকেই তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নিজ দেশ থেকে। যুক্তরাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছে,তাতে তার অন্তত ৩০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের মোস্ট ওয়ানটেড ব্যক্তির তালিকায় রয়েছে তার নাম। বর্তমানে তিনি রাশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। রাশিয়া স্নোডেনকে তিন বছর থাকার অনুমতি দিয়েছে। আগামী বছর স্নোডেন রাশিয়ার নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি।

/এসএ/বিএ/