আরকানসাসে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর ময়নাতদন্তের আদেশ আদালতের

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিছানা, ইনসেটে কেনেথ উইলিয়ামসআরকানসাসে বিষাক্ত ইনজেকশনের মাধ্যমে ৩৮ বছর বয়সী কেনেথ উইলিয়ামসের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর এক বিচারক ময়নাতদন্তের আদেশ দিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, মৃত্যুর সময়ে তিনি ব্যাথায় কাতড়াচ্ছিলেন। গত এক সপ্তাহে চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে মার্কিন অঙ্গরাজ্য আরকানসাস প্রশাসন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। 

কেনেথ উইলিয়ামসের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় উপস্থিত এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, মৃত্যুর আগমুহূর্তে তিনি কাঁপছিলেন এবং আর্তনাদ করছিলেন।

কেনেথের আইনজীবীরা এ মৃত্যুদণ্ডকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন। তারা আরও বলেন, ‘বিষাক্ত মিডাজোলাম দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে কারও জ্ঞান থাকার কথা নয়। কিন্তু মৃত্যুর সময় কেনেথের জ্ঞান ছিল এবং তিনি কাতড়াচ্ছিলেন।’   

কেনেথের মৃতুদণ্ড কার্যকর সঠিক উপায়ে হয়নি, এ অভিযোগ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন জ্যাসন ম্যাকঘি। ডিস্ট্রিক্ট জজ ক্রিস্টিন বেকার ময়নাতদন্তের আদেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে কেনেথের রক্ত ও টিস্যুর নমুনা সংরক্ষণেরও আদেশ দিয়েছেন আদালত।

জ্যাসন নিজেও মৃত্যুদণ্ডের আসামি। বৃহস্পতিবার তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কথা থাকলেও আদালতের আদেশে তা স্থগিত করা হয়।  

এর আগে আরকানসাসের রিপাবলিকান গভর্নর আসা হাচিনসনের কাছে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি খতিয়ে দেখার আবেদন করা হয়। কিন্তু তিনি ওই আবেদন খারিজ করেছেন।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিষাক্ত ইনজেকশনের মাধ্যমে কেনেথ উইলিয়ামসের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৫ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

কেনেথ উইলিয়ামসের বিরুদ্ধে ১৯৯৮ সালে আরকানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ে এক চিয়ারলিডারকে খুনের অভিযোগ রয়েছে। গত বছর বিচার চলাকালীন অবস্থায় হাই-সিকিউরিটি কারাগার থেকে পালিয়েছিলেন কেনেথ। সেখান থেকে বেরিয়েই এক কৃষককে খুন করে তার ট্রাক চুরি করেন কেনেথ। পুলিশ ধাওয়া করলে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় অন্য এক গাড়ির চালকের। ২০০৫ সালে কেনেথ স্বীকার করেছিলেন, যে দিন তিনি ওই চিয়ারলিডারকে হত্যা করেন, একইদিনে ৩৬ বছরের আর এক ব্যক্তিও খুন হন তার হাতে।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের মধ্যে ১৯টিতে মৃতুদণ্ড বাতিল হলেও ৩১টিতে কার্যকর রয়েছে। ইলেকট্রিক চেয়ার বা বিষাক্ত ইনজেকশন প্রয়োগের মাধ্যমেই সাধারণত তা কার্যকর করা হয়।

চলতি মাসে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষাক্ত ইনজেকশন মিডাজোলামের সরবরাহের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আরকানসাস কর্তৃপক্ষ ৩০ এপ্রিলের মধ্যে আট অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরিকল্পনা করে। তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং মৃত্যুদণ্ডবিরোধী মানুষেরা আরকানসাসের রিপাবলিকান গভর্নরের এ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করেন। এক লাখ ৫৭ হাজার স্বাক্ষরসহ দাবিনামাও পেশ করা হয় গভর্নরের কাছে। যে বিষাক্ত ইনজেকশনের প্রয়োগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরিকল্পনা করা হয়, সেই মিডাজোলামের প্রস্তুতকারক ম্যাককেসন কর্পোরেশনও আরকানসাস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফেডারেল আদালতে অভিযোগ দায়ের করে জানায়, হত্যার উদ্দেশ্য গোপন করে এই ড্রাগ কিনেছে আরকানসাস প্রশাসন, যা কোম্পানির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।  

/এসএ/