কী থাকছে ট্রাম্পের ইসলাম সংক্রান্ত ভাষণে?

সৌদি বাদশাহর সঙ্গে ট্রাম্প ও মেলানিয়া
সৌদি আরব সফরের দ্বিতীয় দিনে ইসলাম নিয়ে বক্তব্য দিতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশের নেতাদের সামনে রবিবার (২১ মে) ইসলাম সম্পর্কে বলার কথা রয়েছে তার। তবে নির্বাচনি প্রচারণার সময় থেকে মুসলিমবিদ্বেষী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ট্রাম্প এবার ইসলাম প্রশ্নে তার অবস্থান নরম করেই বক্তব্য রাখবেন বলে আভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। সূত্রের বরাত দিয়ে তারা জানিয়েছে, র‍্যাডিকাল ইসলামের বিপরীতে ওই ধর্মে বর্ণিত শান্তির বাণীকেই সামনে আনার চেষ্টা করবেন তিনি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ ক’দিন আগেই জানিয়েছে, চলতি মাসের ২৩ তারিখে ট্রাম্পের সৌদি সফরের দিনক্ষণ ঠিক হয়ে রয়েছে। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের আমন্ত্রণে রিয়াদে আয়োজিত আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিয়ে সম্মেলনে যোগ দিতে যাবেন তিনি। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ওই সফরেই ইসলাম নিয়ে কথা বলবেন ট্রাম্প।
মাত্র দুই মাস হলো, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছয়টি মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সংশোধিত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। শুরু থেকেই ট্রাম্পের এ আদেশকে পরোক্ষ মুসলিম নিষেধাজ্ঞা হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। নির্বাচনি প্রচারণার সময়ও একের পর এক মুসলিমবিরোধী বক্তব্য দিয়ে তুমুল সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। এবার সেই ট্রাম্পই সৌদি আরব সফরে গিয়ে ইসলাম নিয়ে বড় ধরনের বক্তব্য রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, রবিবার ৫০ জন মুসলিম নেতার সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন ট্রাম্প। সেখানে ইসলাম নিয়ে তার বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে।
রিয়াদ থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি হাশেম আহেলবারা জানান, মুসলিম নেতাদের সামনে বক্তব্য রাখার সময় সাবধানতা অবলম্বন করবেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প তার বক্তব্যে রেডিক্যাল মতাদর্শ মোকাবিলার ওপর জোর দেবেন। ইসলাম কিংবা মুসলিম বিশ্বের অনুভূতিতে আঘাত করতে পারে এমন কিছু বলা থেকে বিরত থাকবেন তিনি।’
ট্রাম্পের প্রভাবশালী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাকমাস্টার বলেন, ট্রাম্প ৫০টিরও বেশি মুসলিম প্রধান দেশের নেতাদের সঙ্গে মিলিত হবেন এবং দুপুরের খাবার খাবেন। সেখানে র‍্যাডিকেল মতাদর্শকে মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তা এবং এবং ইসলামের শান্তিপূর্ণ দর্শনের আশাবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেবেন তিনি।’
ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচআর ম্যাকমাস্টার আগেই জানিয়েছিলেন, মুসলিম নেতাদের ওই মধ্যাহ্নভোজেই ডোনাল্ড ট্রাম্প কট্টরবাদী মতাদর্শের বিরুদ্ধে উৎসাহমূলক ভাষণ দিবেন। সেখানে তিনি ইসলামের শান্তিপূর্ণ আদর্শ সম্পর্কে কথা বলবেন। আর এবার নাম প্রকাশ না করে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্পের বক্তব্য ‘আশাব্যঞ্জক’ হবে। উল্লেখ্য, ইসলাম প্রশ্নে ভাষণের পাশাপাশি তিনি ৫০টির অধিক মুসলিম দেশের নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন। তাদের সঙ্গে দুপুরের খাবারও খাবেন তিনি।
মুসলিম সম্প্রদায়কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ট্রাম্প বহুদিন থেকেই সমালোচিত হয়ে আসছেন। গত নভেম্বরে প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় ১৩০ জন নিহত হওয়ার পর মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন। আর এর পর বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। নিজ দেশ এমনকি নিজের দল রিপাবলিকানের সদস্যদের পক্ষ থেকেও ওই বক্তব্যের নিন্দা জানানো হয়।
ক্ষমতা গ্রহণের পরই ২৭ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে এক নির্বাহী আদেশে সাত মুসলিম-প্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র সফরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশগুলো হলো- ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেন।যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসবাদীদের প্রবেশ বন্ধের যুক্তি দেখিয়ে ওই আদেশ দেন ট্রাম্প। কিন্তু সমালোচকরা একে বৈষম্য বলে আখ্যায়িত করেন। নোবেল বিজয়ী শিক্ষা অধিকারকর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতিষ্ঠাতা,বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ট্রাম্পের এ নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেন।
পরে সিয়াটলের একজন বিচারক ট্রাম্পের ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিতের আদেশ দেন। ট্রাম্প প্রশাসন ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলেও সান-ফ্রান্সিসকোভিত্তিক তিন বিচারকের প্যানেল তা খারিজ করেন।
এরপর সাত মুসলিম-প্রধান দেশের নাগরিকদের ওপর স্থগিত হয়ে যাওয়া নিষেধাজ্ঞা সংশোধন করে ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। নতুন জারি করা নিষেধাজ্ঞায় আগের তালিকায় থাকা ইরাককে বাদ দেওয়া হয়। তবে অপর ছয়টি দেশের নাগরিকদের জন্য নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়। সেই নিষেধাজ্ঞাও এরইমধ্যে আইনি চ্যালেঞ্জে পড়েছে।
/এফইউ/বিএ/