লন্ডন মসজিদে হামলাকারীর পরিচয় কী?

TELEMMGLPICT000132404800_1-large_trans_NvBQzQNjv4BqfKbiXUwTAOM3gDGzGiDvmYD6_11r6CPCKmOL8W0sAac

লন্ডনের ফিনসবারি পার্ক এলাকায় মসজিদের কাছে মুসল্লিদের ওপর হামলার অভিযোগে গ্রেফতার ড্যারেন অসবর্ন বর্ণবাদী ছিলেন না বলে এরইমধ্যে দাবি করেছে তার পরিবার। তাদের দাবি, অসবর্ন মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তার মানসিক সমস্যা ছিল বলেও পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। প্রতিবেশীরাও বলছেন, কখনও কখনও অসবর্নকে তারা আগ্রাসী আচরণ করতে দেখলেও তার মধ্যে সন্ত্রাসী মনোভাব ছিল না। কিন্তু, হামলার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ড্যারেন অসবর্ন চিৎকার করে বলছিলেন তিনি সব মুসলিমকে হত্যা করতে চান। মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রধানও বলেছেন এটি স্পষ্টত ইসলামবিদ্বেষী হামলা। তা যদি সত্যি হয়, তবে কেনইবা হঠাৎ করে ইসলামবিদ্বেষী হয়ে উঠলেন অসবর্ন? আবার পরিবারের দাবি যদি সত্য হয়, অর্থাৎ তিনি যদি বর্ণবাদী না হয়ে থাকেন তবে সব মুসলিমকে হত্যা করতে চাইলেন কেন? এ প্রশ্নগুলো এখন জোরালো হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি অসবর্ন কে, কিভাবে তার বেড়ে ওঠা তা নিয়েও কৌতুহল তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের উত্তর লন্ডনের ফিনসবারি পার্কের মসজিদে রবিবার গাড়ি নিয়ে হামলা চালায় ৪৭ বছর বয়সী অসবর্ন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, ৪ সন্তানের বাবা অসবর্ন কার্ডিফের বাসিন্দা। 'অসবর্ন' নামটির সঙ্গে লোকায়ত-খ্রিস্ট্রীয় ঐতিহ্যের সম্পর্ক রয়েছে।  ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলোতে এর বাইরে আলাদা করে সন্দেহভাজন ওই সন্ত্রাসীর ধর্ম সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। কেবল তার অমুসলিম পরিচয়টা উঠে এসেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অসবোর্নের জন্ম সিঙ্গাপুরে। তবে বাবা-মার সাথে সমারসেটের ওয়েস্টন-সুপার-মেরে তার বেড়ে ওঠা। ব্রোডক ম্যাথমেটিকস ও কম্পিউটিং কলেজে পড়াশোনা করেন তিনি। কয়েকবছর আগে ওয়েস্টন ছেড়ে পেনটুইনে সঙ্গী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস শুরু করেন অসবর্ন। সন্তানদের প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যেতেন তিনি। প্রতিবেশীরা জানায়, পরিবারের সঙ্গে অনেক সময় কাটাতেন এ ব্যক্তি। রবিবার হামলার দিনও রান্নাঘরে তাকে গান গাইতে শুনেছেন অনেকে। 

তার বাবা দাবি করেছেন গাড়ি চালানোর সময় অনেক বেশি মদপান করেছিলেন অসবর্ন। অসবর্নের মা ক্রিস্টিন দাবি করেন, তার সন্তান সন্ত্রাসী নয় এবং মুসলিমদের প্রতি তার কোনও ঘৃণা নেই। ৭২ বছর বয়সী ওই নারী বলেন, ‘আমরা তাকে টিভিতে দেখেই চিনে ফেলি। আমার সন্তান সন্ত্রাসী নয়, কিছু মানসিক সমস্যায় ভুগছে সে।’

তার বোন নিকোলা অসবোর্ন জানায়, অনেকদিন ধরেই মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন তার ভাই। তিনি বলেন, ‘এখানে আসলে স্যরি বলে কিছু হবে না। কিন্তু আমার ভাইয়ের মানসিক সমস্যার কারণে যা হয়েছে তার জন্য আমি দুঃখিত।’ তার ভাই সন্ত্রাসে আগ্রহী ছিলেন না বলেও দাবি করেন তিনি।

এছাড়া এই হামলা কোনওপ্রকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও করা হয়নি বলে দাবি তার বোনের। নিকোলা বলেন, কোনওরকম রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে তার ভাই এমন কাজ করেনি। তার দাবি, অসবোর্ন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকেও চেনে না। তাকে কখনও মুসলিম বিদ্বেষী কিংবা বর্ণবাদী কোনও কথা বলতে শোনেননি তারা।’

london-mosque-2

গ্রেফতারকৃত অসবর্ন সন্ত্রাসী নয় দাবি করলেও তার বিরুদ্ধে মুসলিম বিদ্বেষের অভিযোগ পাওয়া গেছে। লন্ডন ব্রিজে হামলার পর থেকেই তার এই মনোভাব স্পষ্ট হয় বলে জানিয়েছেন তার প্রতিবেশীরা। এছাড়া গাড়িহামলা চালানোর পর তাকে যখন স্থানীয়রা ধরে ফেলে, তখন তিনি চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমি সব মুসলিমদের হত্যা করতে চাই।’

চলতি মাসের শুরুর দিকে এক এশিয়ান প্রতিবেশীর ১২ বছরের ছেলের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিলেন ড্যারেন। হামলার পর টেলিভিশনে অসবর্নকে দেখার পর প্রতিবেশীরাই পুলিশকে তার পরিচয় জানায়। তারা তাকে আগ্রাসী বলে মনে করেন কিন্তু সন্ত্রাসী কখনোই ভাবতে পারেননি।

তার মা ক্রিস্টি অসবোর্ন বলেন, তার সন্তান কিছুটা জটিল প্রকৃতির। তিনি বলেন, ‘আমি তার পক্ষ নিচ্ছি না। কিন্তু তার আচরণে আমি মর্মাহত। আমি এটা কাটিয়ে উঠতে পারছি না।’

ক্রিস্টিন দাবি করেন, অসবোর্নের মানসিক সমস্যা ছিলো এবং তার চিকিৎসা চলছিলো। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে সন্ত্রাসী নয়, তার কিছু মানসিক সমস্যা ছিলো। আর কিছু নয়।’

প্রতিবেশীরাও জানায়, অসবোর্নের মানসিক সমস্যা নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে ক্রিস্টিনকে। অসবর্নের বন্ধুরাও জানিয়েছে খুবই বন্ধুবৎসল ছিলো সে।

তবে কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, সম্প্রতি তার সঙ্গীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে থাকতে পারে অসবর্নের। কারণ তাকে প্রায়ই রাস্তায় চিৎকার করতে শোনা যেত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী জানান, ‘আমি যখন ঘটনাটি জানতে পারি আমিই যেন অসুস্থ হয়ে পড়ি। এমনটা কখনোই ভাবিনি আমি। সে হয়তো অনেক মদ্যপ ছিলো।’

ফার্মাসিস্ট রেবেকা কার্পেন্টার বলেন, ‘সে সবসময়ই অনেক চিৎকার করতো। প্রায়ই স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে চিৎকার করতে শোনা যেত তাকে।’

তিনি বলেন, ‘অনেক পুরোনা একটা গাড়ি চালাতেন অসবোর্ন। তবে কারও কোনও সমস্যা করেনি। শুধু চিৎকার করতেন খুব। আমাদের কেউই তার সঙ্গে কথা বলেনি।’

রবিবার হামলার আগে বাড়ি থেকে ১৫ মাইল দূরে একটি ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে রওনা হয়েছিলেন বলে জানা যায়। সেখান থেকে ১৫০ মাইলেরও বেশি পেরিয়ে উত্তর লন্ডনে পৌঁছান তিনি। ভ্যানগাড়ির মালিক জানায়, তারা খুবই দুঃখিত যে হামলায় তাদের একটি গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে।

পুলিশও অসবর্নকে আগে থেকে চিনতো না বলে জানিয়েছে।  
সূত্র: টেলিগ্রাফ, ইন্ডিপেনডেন্ট, বিবিসি


/এফইউ/