ঈদের নামাজে ‘কালো ব্যাজ পড়া’র প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গে বিতর্ক

 

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুপরিচিত ফুরফুরা শরিফ দরগার পীর সে রাজ্যের মুসলমানদের কালো ব্যাজ পড়ে ঈদের নামাজ পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার অভিযোগ, ছুটি নিয়ে হিন্দু-মুসলমান বৈষম্য জারি রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। তার বক্তব্যের সঙ্গে মুসলিম নেতারা অনেকেই একমত। তবে প্রতিবাদ হিসেবে কালো ব্যাজ ধারণকে যথাযথ মনে করছেন না অনেকেই। তারা বলছেন, এই কর্মকাণ্ড শরীয়াবিরোধী।  ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বাংলা অনলাইন ভার্সন-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।
ভারতে মুসলমানদের ঈদের নামাজের ছবি। (ফাইল ছবি)

তোহা সিদ্দিকী নামের ওই পীর অভিযোগ করেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর কাছে দাবি করে আসছি যে ঈদের দিন অন্তত দু'দিন করে ছুটি দেওয়া হোক। তিনি আমাদের কথায় কর্ণপাত করেননি।’ ফুরফুরার পীর প্রশ্ন তোলেন, ‘হিন্দু ভাইয়েরা না চাইতেই দূর্গাপূজো, কালীপূজো বা ছটপূজোয় লম্বা ছুটি পাচ্ছেন। উনাদের ছুটি দেওয়া হচ্ছে সেটা স্বাগত, আমরা খুশি। কিন্তু মুসলমানদের উৎসবের ছুটি কেন একদিন করে বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না?’

তোহা বিবিসিকে বলেন, মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব রোজার ঈদ আর কোরবানি ঈদ। বহু মুসলমান বাইরে কাজ করেন, তবে ঈদের সময়ে বাড়ি ফেরেন। একদিনের মধ্যেই তাঁদের উৎসবের ছুটি কাটিয়ে কর্মক্ষেত্রে ফিরতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেন যে তিনি সংখ্যাগুরু আর সংখ্যালঘু - উভয়েরই মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সংখ্যালঘু হিসাবে আমরা তো কিছুই পাচ্ছি না,’ বলছিলেন তোহা সিদ্দিকী।

এরই প্রতিবাদ জানাতে তিনি নিজে কালো ব্যাজ পড়ে ঈদের নামাজ পড়বেন বলে তিনি জানান। বলেন, ‘আমার সব ভক্তদের বলবো, বাংলার সব মুসলমান ভাইদেরও বলবো, আপনারা কালো ব্যাজ পড়ে ঈদগাহে গিয়ে নামাজ পড়ুন।’

বৈষম্যের ব্যাপারটি স্বীকার করলেও প্রতিবাদের পথ নিয়ে একমত নন রাজ্যের অন্য মুসলিম নেতারা। রাজ্যের মন্ত্রী ও জামিয়াত-এ উলেমা-এ হিন্দের নেতা মৌলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী ঈদের দিনে কালো ব্যাজ পড়ার ডাক দেওয়াকে দায়িত্বহীনতার পরিচয় বলে মনে করছেন। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, ‘ঈদের দিন কালো ব্যাজ পড়ে নামাজ পড়ার আহ্বানে সমাজের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াবে। আর শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, সারা ভারতেই ঈদে একদিনই ছুটি থাকে। বরং মমতা ব্যানার্জী গত বছর ঈদের দু'দিন ছুটি দিয়েছিলেন। আবেদন করলে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। কিন্তু তার বদলে যদি খুশীর ঈদের দিন কেউ কালো ব্যাজ পড়ার কথা বলেন, তাহলে দায়িত্বহীনতার পরিচয় ছাড়া আর কী বলব একে?’

পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের প্রধান মুহাম্মদ কামরুজ্জামানের কথায়, ‘দু'দিন ছুটি তো দেওয়াই উচিত। কিন্তু খুশীর ঈদের দিন কোনও রকম প্রতিবাদ বা কালো ব্যাজ পড়াটাও আমরা মানতে পারবো না। খুশীর দিনে কেন শোকজ্ঞাপনের প্রতীক কালো ব্যাজ পড়বো? এটা তো শরিয়ত সম্মত নয়।’

/বিএ/