মালয়েশিয়ায় অনিশ্চয়তার মুখে কয়েক লাখ শ্রমিক

মালয়েশিয়ায় অভিবাসী শ্রমিক
মালয়েশিয়ায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের অবৈধ শ্রমিকদের বৈধতা নিশ্চিতের জন্য ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছে সে দেশের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। তবে আপাত ব্যবস্থা হিসেবে ওই অবৈধ শ্রমিকদের ৩০ জুনের মধ্যে ই-কার্ড তথা কাজের অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে বলেছিল তারা। অভিবাসন কর্তৃপক্ষের দাবি, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সম্ভাব্য অবৈধ শ্রমিকদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৩ শতাংশের জন্য এই কার্ড সংগ্রহ করেছে তাদের নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে ই-কার্ড সংগ্রহের সময়সীমা কোনওভাবেই আর বাড়াবে না মালয়েশিয়া। এতে বিভিন্ন দেশের কয়েক লাখ শ্রমিকের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এ জন্য নিয়োগদাতাদের দুষছে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিকরা। 

চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বৈধ কাগজপত্রবিহীন শ্রমিকদের ই-কার্ড বা এনফোর্সমেন্ট কার্ড আবেদনের সুযোগ দেয় মালয়েশিয়া সরকার। বলা হয়, ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ই-কার্ডের মেয়াদ থাকবে এবং এ সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের বৈধ কাগজপত্রের প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। ই-কার্ড রেজিস্ট্রেশনের চূড়ান্ত সময়সীমা ছিল ৩০ জুন। অভিবাসন কর্তৃপক্ষের ধারণা ছিল, অন্তত ৪ লাখ অবৈধ শ্রমিক ই কার্ড সংগ্রহ করবেন। তবে ইমিগ্রেশন দফতরের তথ্য অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২৬ হাজার ৯৫৭টি কোম্পানির মোট এক লাখ ৫৫ হাজার ৬৮০ জন কর্মী ই-কার্ডের আবেদন করেন। ১৫টি দেশের নাগরিক এই আবেদন করেছেন। এদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা ৭১ হাজার ৯০৩; এর পরেই রয়েছে ইন্দোনেশিয়া (২৬ হাজার ৭৬৪) ও মিয়ানমারের (১১ হাজার ৮২৫) নাগরিকরা। কিছু আবেদন বাতিল হওয়ায় সময়সীমা শেষে কেবল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫৭১ শ্রমিক ই-কার্ড পেয়েছেন। সেই হিসেবে আড়াই লাখেরও বেশি শ্রমিক অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।  

অভিবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযান
ই-কার্ড সংগ্রহের সময়সীমা শেষ হতেই অনুমতিপত্র সংগ্রহ না করা শ্রমিকদের আটকে অভিযান শুরু করে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ। ১৫৫টি এলাকায় অভিযান চালিয়ে এরইমধ্যে বিপুল সংখ্যক অভিবাসীকে আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আটকদের মধ্যে ৫১৫ জন বাংলাদেশি ছাড়াও, ১৩৫ জন ইন্দোনেশীয়, ১০২ জন ফিলিপিনো, ৫০ জন থাই ও দুজন ভিয়েতনামি নাগরিক রয়েছেন। আটকদের মধ্যে ১০১ জন নারী ও তিন শিশুও রয়েছে ।

শনিবার (১ জুলাই) মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের সাফ জানিয়ে দেন, ই-কার্ড আবেদনের মেয়াদ বাড়ানোর কোনও সম্ভাবনা নেই। তাদেরকে (যারা ই কার্ডের আবেদন করেনি এবং নিয়োগদাতা) কঠোর ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হবে। এই দুরাবস্থার জন্য পরোক্ষে নিয়োগদাতাদের দায়ী করে তিনি বলেন, ‘নিয়োগতাদের আমরা প্রয়োজনের চেয়েও বেশি সময় দিয়েছি। অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক মুসতফারও বেশ কয়েকবার করে এ সময়সীমার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন এবং সতর্ক করেছেন। তারপরও মাত্র ২৩ শতাংশ বিদেশি শ্রমিক ই-কার্ডের জন্য আবেদন করেছে। আমাদের এখন কঠোর হওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই। রোজগারের আশায় শ্রমিকরা আমাদের দেশে এসেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তা বৈধ উপায়ে করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা তাদের বাধা দিই না।’

কেবল অভিবাসন কর্তৃপক্ষ নয়, শ্রমিকরাও তাদের দুরাবস্থার জন্য নিয়োগদাতাদেরই দায়ী করেছেন। মিয়ানমারের এক নারী শ্রমিক অভিযোগ করেন, তিনি ই-কার্ডের সময়সীমার ব্যাপারে অবগত ছিলেন না। ওই নারী শ্রমিক বলেন, ‘আমার বস কার্ড সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন কিন্তু সবাই তা পায়নি।’

তিনি আরও দাবি করেন, তার নিয়োগদাতা তাদেরকে সময়সীমা নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে নিষেধ করেছিলেন। অথচ ওই সময়সীমা শেষ হওয়ার একদিন আগে অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক মুসতফার সবাইকে সতর্ক করেন যে, ‘ই কার্ড আবেদনের মেয়াদ বাড়ানোর কোনও সম্ভাবনা নেই।’

এদিকে, সৌদি আরবে অবস্থিত অবৈধ বাংলাদেশিদের জুন ২৫ পর্যন্ত দেশে ফেরত আসার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার সময়সীমা এক মাস বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত লেবার কাউন্সিলর মোহাম্মাদ সারওয়ার আলম। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজারের মতো বাংলাদেশির দেশে ফেরত আসার জন্য ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করা হয়েছে। 

/বিএ/