তালেবান দূতাবাস স্থাপনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমিরাতের দেনদরবারের খবর ফাঁস

আবু ধাবিতে তালেবান দূতাবাস খুলতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেনদরবার করেছিল আমিরাত। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়েছে। চলতি বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্র আর আমিরাতের রাষ্ট্রদূতের মধ্যে বিনিময়কৃত বেশকিছু ইমেইল ফাঁস করে গ্লোবাললিকস নামের এক হ্যাকার গ্রুপ। সেইসব ইমেইলের কয়েকটিকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, দূতাবাসটি শেষ পর্যন্ত কাতারে স্থাপিত হওয়ায় আমিরাত ক্ষুব্ধ হয়।
noname

কাতার-আমিরাত দ্বন্দ্ব আজকের নয়। প্রায়ই আমিরাতের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, কাতার সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ২০১৩ সালে কাতারে যাত্রা শুরু করা এই দূতাবাস মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবানের শান্তি আলোচনার জন্য খোলা হয়েছে বলে দাবি কাতারের। তবে ২০১৩ সালে রাজধানী দোহায় তালেবান দূতাবাস প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ওই ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদে কাতারের সমর্থনের উদাহরণ হিসেবে হাজির করা হয়। দোহার ওপর সৌদি জোটের সাম্প্রতিক অবরোধের অন্যতম যুক্তিও দূতাবাস স্থাপনের ওই ঘটনাটি। তবে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে আমিরাত নিজেই চেয়েছিল তালেবান দূতাবাস স্থাপন করতে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াশিংটনে আমিরাতি রাষ্ট্রদূত ইউসেফ আল ওতাইবা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহ বিন জায়েদের কাছ থেকে ফোনকল পেয়েছিলেন। সে সময়ই আমিরাতের বদলে কাতারে তালেবান দূতাবাস স্থাপনের কারণে তাকে তিরস্কার করা হয়। মার্কিন কর্মকর্তাকে পাঠানো এক ইমেইলে ওতাইবা লেখেন, ‘আমিরাতকে না জানিয়ে কিভাবে এই কাজটা করা হলো তা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে টেলিফোন দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।’

২০১১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পাঠানো আরেকটি ইমেইলকে উদ্ধৃত করে নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, তালেবান দূতাবাস সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করেন আমিরাতি রাষ্ট্রদূত। সে দেশের পররাষ্ট্র দফতরের অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি জেফরি ফেল্টম্যানকে পাঠানো এক ইমেইলে আমিরাতের কূটনীতিক মোহাম্মদ মাহমুদ আল খাজা লন্ডন টাইমসের এক প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে দাবি করেন, 'যুক্তরাষ্ট্র কাতারে তালেবানের অফিসকে সমর্থন দিচ্ছে। তবে আমরা জানতাম আমিরাতই আপনাদের প্রথম পছন্দ ছিলো। অথচ এ বিষয়ে আমরা কিছু জানতেই পারলাম না।’ গ্লোবাললিকস ইমেইলটি ফাঁস করে নিউজ উইককে জানিয়েছিল,  ওই ইমেইলের মাধ্যমে প্রমাণ হয়, মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক সংকটে কি রকমের ‘ভণ্ডামি’ চলছে।

চার বছর আগে ওয়াশিংটনের সমর্থনেই তালেবানের দূতাবাস স্থাপন করেছিল কাতার। ২০১১ সালে যখন এই ইমেইলগুলো চালাচালি করা হয়, তখন ওবামা প্রশাসন তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে শান্তি আলোচনার পটভূমি রচনার চেষ্টা করছে। ২০১৪ সাল বেশিরভাগ সেনাই সরিয়ে নেওয়া হয় আফগানিস্তান থেকে। তবে এখনও সে দেশে শান্তি ফিরে আসেনি। সে সময় তালেবান অফিস চালু করায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেকোনও দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন এবং তালেবানদে সঙ্গে শান্তি আলোচনায় যেতে রাজি হননি।

/এমএইচ/বিএ/