৯/১১-এর মামলা থেকে নিষ্কৃতি পেতে তৎপর সৌদি আরব

nonameযুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার নেপথ্যে সৌদি আরবের হাত ছিল, এমন অভিযোগে আমেরিকায় ২৫টি মামলা হয়েছে। ওই হামলায় সৌদি আরবের ভূমিকা তুলে ধরে এসব মামলা করা হয়। হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা এসব মামলা দায়ের করেন। এখন সৌদি আরব চাইছে এসব মামলা থেকে নিষ্কৃতি চাইছে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিচারকের প্রতি মামলাগুলো খারিজের আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। সোমবার আদালতে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

ম্যানহাটনের এক ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে দায়ের করা মামলায় সৌদি আরবকে প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবিরা দাবি করেছেন, অভিযোগকারীরা ওই ঘটনায় সৌদি সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে পারেনি। বিমান ছিনতাই এবং ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও পেন্টাগনে হামলার সঙ্গে যুক্ত থাকা আল কায়েদার লোকজন সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে- এমন কোনও তথ্যপ্রমাণ তারা দেখাতে পারেননি।

ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার এবং পেন্টাগনে চালানো ওই দুই হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হন। দেশটির আইনজীবিদের দাবি, সার্বভৌমত্ব বিবেচনায়ও সৌদি আরব এ ধরনের অভিযোগ থেকে রেহাই বা দায়মুক্তি পেতে পারে।

ওই সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের একজন আইনজীবি জেমস ক্রেন্ডলার। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে তিনি বলেন, এ ধরনের মামলা হওয়াটাই প্রত্যাশিত ছিল। আমাদের কাছে এমন বহু অভিযোগ আছে যে, এ ঘটনার সঙ্গে সৌদি দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোর যোগসূত্র রয়েছে। সৌদি সরকার এটা অস্বীকার করতে পারে না।

noname

বাদীপক্ষের এমন অভিযোগ অবশ্য নাকচ করে দিয়েছেন সৌদি আইনজীবিরা। এর স্বপক্ষে তারা কিছু নথি হাজির করেছেন। এর মধ্যে সিআইএ’র তৈরি করা ২০০৫ সালের একটি প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপও রয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৯/১১-এর হামলাকারীদের প্রতি সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সৌদি সমর্থনপুষ্ট আইনজীবিরা অস্বীকার করলেও তাদের এমন দাবি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এক ধরনের ধোঁয়াশা রয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বিমান ছিনতাইকারী ১৫ থেকে ১৯ জন সৌদি নাগরিক। সৌদি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে তাদের সাক্ষাতের মতো ঘটনাও ঘটেছে। যেমন-ওমর আল বাইয়াওমি-র মতো সৌদি নাগরিকের সঙ্গে দেশটির কূটনীতিকদের যোগাযোগ ছিল।

২০১৬ সালের জুনে সিআইএ প্রধান জন ব্রেনান বলেন, নাইন ইলেভেনের হামলা সংক্রান্ত ২০০২ সালের কংগ্রেসের গোপন প্রতিবেদন সৌদি আরবের সম্পৃক্ততার প্রমাণ নয়। সৌদি মালিকানাধীন টেলিভিশন আল আরাবিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রেনান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি ২৮ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনটিকে ৯/১১ হামলায় সৌদি আরবের যোগসাজশের প্রমাণ হিসেবে জনগণের  গ্রহণ করা উচিত হবে না।’

noname

ব্রেনান উল্লেখ করেন, আল কায়েদা জঙ্গিরা বিমান ছিনতাই করে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, পেন্টাগন ও পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে আঘাত হানার এক বছর পর এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এটা খুবই প্রাথমিক পর্যালোচনা। হামলার পিছনে কারা ছিল সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ৯/১১ কমিশন সৌদি সম্পৃক্ততা ও সৌদি সরকারের সম্পৃক্ততার অভিযোগ আদ্যোপান্ত যাচাই বাছাই করেছে।  প্রতিষ্ঠান হিসেবে সৌদি সরকার বা দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে ৯/১১ হামলার সমর্থন করেছে এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সমালোচকরা মনে করেন সিআইএ প্রধান জন ব্রেনান-এর এমন বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে সৌদি আরবের ব্যাপক লবিংয়ের ফলাফল। এই লবিংয়ে সাবেক দুই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বারাক ওবামা’ও প্রভাবিত ছিলেন বলে মনে করা হয়। তবে সৌদি আরবের ব্যাপক লবিংয়ের পরও ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন কংগ্রেস একটি বিল পাস হয়। ওই বিলে নাইন ইলেভেনের ঘটনায় সৌদি সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সুযোগ রাখা হয়। বিলটি সর্বসম্মতিক্রমে কণ্ঠভোটে পাস হয়।

তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তখন ওই বিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়ার পরও তিনি এতে ভেটো দেওয়ার হুমকি দেন। এক্ষেত্রে তার যুক্তি ছিল, এই বিলের কারণে সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রিয়াদের মতো ঘনিষ্ঠ মিত্রের সমর্থন লাভ থেকে আমেরিকা বঞ্চিত হতে পারে।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আশঙ্কা করেছেন, কোনওভাবেই এই সম্পর্ক নষ্ট হতে দেবে না মার্কিন প্রধান দুই রাজনৈতিক দল।  কেননা উভয় দলই পররাষ্ট্রনীতির প্রশ্নে সৌদি আারবকে ঘনিষ্ঠ সহচর মনে করে থাকে। সূত্র: আল জাজিরা, ইন্ডিপেনডেন্ট।

/এমপি/