সময় এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় হেট ক্রাইম নিয়ন্ত্রণের

Social Mediaঅনলাইনে বাড়ছে হেট ক্রাইম বা বিদ্বেষমূলক হামলার সংখ্যা। অনলাইন ছাড়িয়ে প্রকাশ্য দিবালোকেও এমন আচরণের শিকার হচ্ছেন অনেকে। ধরা যাক পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সাজিদ জাভেদ-এর কথা। লন্ডনের রাস্তায় যদি কেউ কাছে এসে তার ওপর নিষ্ঠুর বর্ণবাদী কৌতুক ছুঁড়ে দেয় সেক্ষেত্রে হেট ক্রাইমের জন্য তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। আর একান্ত গ্রেফতার করা না হলেও নিদেনপক্ষে তাকে সতর্ক করে দেওয়া হবে। কিন্তু এই অপরাধীরা যদি হেট ক্রাইমের জন্য রাজপথের বদলে সোশ্যাল মিডিয়াকে বেছে নেয়! এক্ষেত্রে তার পরিণতি কি হবে সেটা অবশ্য এখনও ততটা পরিষ্কার নয়। বলা চলে, এক্ষেত্রে বিষয়টি এক ধরনের অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত হতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ায় হেট ক্রাইমের সংজ্ঞা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে-এটা ঠিক। তবে এখন সময় এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় হেট ক্রাইম নিয়ন্ত্রণের।

এই সভ্য(!) যুগেও জাতিগত বা লৈঙ্গিক কারণে মানুষ হেট ক্রাইমের শিকার হতে পারেন। সাধারণত অনলাইনে হেট ক্রাইমের জন্য ফেসবুক, টুইটার বা খ্যাতনামা নিউজ সাইটগুলোর কমেন্ট বক্সকে বেছে নেয় অপরাধীরা। ‘হিটলার ঠিক পথেই ছিলেন’-সেখানে এমনটা মনে করার মতো মানুষও হয়তো মিলবে। এই একটা লাইন বা বাক্য আরও বহু কিছুর দিকে তাদের নিয়ে যেতে পারে।

অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তিও ট্রল বা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও কথা হয়েছে। খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ-কেউই এমন আক্রমণ থেকে শতভাগ সুরক্ষিত নন। কিন্তু জাতি, ধর্ম বা বর্ণের ভিত্তিতে কারও সঙ্গে এমন আচরণ নিন্দনীয়। এটা অপরাধ। সেটা সামনাসামনিই হোক আর অনলাইনেই হোক। এসব কর্মকাণ্ড সমাজে বিভক্তি তৈরি করছে। এটা মত প্রকাশের স্বাধীনতার অপব্যবহার। এসব বন্ধ হওয়া উচিত।

চলতি বছরের এপ্রিলে অনলাইনে ঘটা হেট ক্রাইম মোকাবেলায় বিশেষ একটি ইউনিটের ঘোষণা দিয়েছে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। ২৪ এপ্রিল সোমবার ওই ঘোষণা দেওয়া হয়। অনলাইনে হয়রানির বিষয়ে অনুসন্ধান ও প্রতিকারে কাজ করে যাচ্ছে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের পাঁচ সদস্যের এই ইউনিট।

লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেন, ‘আমরা জানি যারা হেট ক্রাইমের শিকার হন তাদের উপর এটা কেমন ভয়াবহ প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে যারা অনলাইনে এমন নিপীড়নের শিকার হন। হামলাকারীরা মনে করে, তারা বোধ হয় পর্দার আড়ালে লুকিয়ে আছেন। কিন্তু তাদের এই ধারণা ভুল।’

প্রথমবারের মতো এই গঠিত বিশেষ এই পুলিশ বাহিনীকে লন্ডনের মেয়র অফিসের পুলিশিং অ্যান্ড ক্রাইম আর্থিক সহায়তা করছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যের পুলিশ ইনোভেশন ফান্ড থেকে এর পেছনে ব্যয় হচ্ছে ৪ লাখ ৫২ হাজার পাউন্ড। ধারণা করা হচ্ছে দুই বছরে বিশেষ এই ইউনিটের পেছনে খরচ হবে ১৭ লাখ পাউন্ড।

সাদিক খান বলেন, ‘আমার পদক্ষেপ স্পষ্ট। এই বিষয়ে কোনও ছাড় নয়। আমরা এসব হামলার শিকারদের সহায়তা করার চেষ্টা করছি। এন্টি-হেট সংগঠনগুলোর পরামর্শ নিয়ে আমরা তাদের নিরাপত্তা জোরদারের চেষ্টা করছি। এই সংগঠনগুলো খতিয়ে দেখবে কোনটা আসলেই ক্ষতি করছে এবং নির্মূল করতে হবে।’

লন্ডন পুলিশের কাছে সব ধরনের হেট ক্রাইমেরই অভিযোগ আসে। ফেসবুক-টুইটারসহ সব সামাজিক মাধ্যমে সংঘটিত এমন অপরাধগুলো খতিয়ে দেখে পুলিশের এই বিশেষ ইউনিট।

সিটি হল থেকে জানানো হয়েছে, এই বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলতে পারে অ্যান্টি হেট ক্রাইম ইউনিট। ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনী পাঁচটি বিষয়ের উপর অনলাইন হেট ক্রাইম নজর রাখবে। তার হলো বর্ণ, ধর্ম, প্রতিবন্ধকতা, যৌনতা বিষয়ক ও লিঙ্গান্তর পরিচয়।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানগুলোতে দেখা যায়, ২০১৬ সালের জুনে ব্রেক্সিটকে ঘিরে জেগে উঠা হেট ক্রাইমের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। ২০১৫/১৬ সালে পুলিশের কাছে এমন ৬২ হাজার ৫১৮ অভিযোগ জমা পড়ে। আগের বছরে ৫২ হাজার ৪৬৫ অভিযোগের তুলনায় যা ১৯ শতাংশ বেশি। সূত্র: ইন্ডিপেনডেন্ট।