যেভাবে জুনে আবারও আলোচনায় এসেছিলেন ডায়না

২০ বছর আগে ‘সড়ক দুর্ঘটনা’য় প্রাণ হারিয়েছিলেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের বিদ্রোহী বধূ প্রিন্সেস ডায়ানা। তবে এই ২০ বছরে বারবার তিনি শিরোনাম হয়েছেন নানান খবরের। বিশ্বজুড়ে তার সৌন্দর্য আর বিদ্রোহের লক্ষকোটি ভক্ত-অনুরাগী সেইসব খবরে চোখ রেখেছেন বিপুল উৎসাহ নিয়ে। সম্প্রতি জুন মাসে তিনি আবারও আলোচনায় এসেছিলেন এক ভুয়া সংবাদের ভিত্তিতে।
প্রিন্সেস ডায়না

চলতি বছর জুনে ইউরনিউজওয়ার ডটকম নামের এক ওয়েবসাইটে গুজব তোলা হয়, যুক্তরাজ্যের এমআই৫ এর সাবেক সদস্য জন হপকিন্স ডায়না হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছেন। হপকিন্সকে উদ্ধৃত করে ওই গুজবে লেখা হয়, ‘ডায়না ব্রিটিশ রাজতন্ত্র হুমকির মুখে ফেলেছিলেন। এজন্য তাকে হত্যা করার নির্দেশ পান তিনি। ডায়না অনেক রাজকীয় গোপন বিষয় জানতেন দাবি করে জন হপকিন্স বলেন, ব্রিটিশ রাজবধূর প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিলো এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করতে চাইছিলেন। আমাকে আদেশ দেওয়া হয় যে তাকে মরতে হবে এবং সেটা যেন দুর্ঘটনা মনে হয়। যুক্তরাজ্যের এমআই৫ এর সাবেক ওই সদস্যের বরাত দিয়ে বলা হয়, ‘আমি এর আগে কোনও নারীকেই হত্যা করিনি, রাজকন্যা তো অনেক পরের বিষয়। তবে আমাকে আদেশ মানতে হয়েছে। আমি রানী ও আমার দেশের জন্য এই কাজ করি।’ 

ব্রিটিশ ডেইলি স্ট্রারের খবরে বলা হয়েছে, ইউরনিউজওয়ার ডটকম নামের এক ওয়েবসাইটটি আদতে ভুয়া নিউজ তৈরির একটি অ্যাপ্লিকেশন সরবরাহ করে। সেই অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করেই এই গুজবটি ছড়ানো হয়েছে। তবে ততোক্ষণে এই গুজবটি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাজার হাজার ডায়না-ভক্ত নিউজটি শেয়ার করেন। এক ভক্ত টুইটারে লেখেন, ‘আমরা কি এই এমআই৫ সদস্যকে নিয়ে কথা বলতে পারি যে ডায়নাকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে।’ অপর একজন লেখেন, ‘এই এজেন্ট মৃত্যুশয্যায় বিদ্রোহী রাজবধূকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। এটা মারাত্মক বিষয়।’

ডায়না

উল্লেখ্য, ইউরনিউজওয়ার ডটকম গুজব ছড়ালেও ডায়নার মৃত্যু দুর্ঘটনা নাকি হত্যাকাণ্ড তা নিয়ে সংশয় কাটেনি এই ২০ বছরেও। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যপ্রমাণ বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় বন্ধু দোদি আল-ফাহাদসহ তার মৃত্যু হয়েছিল। বিবিসি, গার্ডিয়ান, টেলিগ্রাফ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের হাতে আসা কিছু তথ্যের বরাত দিয়ে একে হত্যাকাণ্ড বলছিলো । দোদির বাবা মোহাম্মদ ফায়েদও চেষ্টা করেছিলেন ওই দুর্ঘটনাটিকে হত্যাকাণ্ড বলে প্রমাণের।   

মৃত্যুর কয়েক মাস আগে বিবিসির প্যানোরমা অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ রাজপরিবারের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন ডায়ানা। তার সঙ্গে এই দুর্ঘটনার সম্পর্ক রয়েছে কিনা এমন সংশয় পোষণ করেন অনেকে।

ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ জারি করেছিলেন ওই মানবতাবাদী রাজবধূ। রাজপ্রাসাদ ছেড়েছিলেন। ছেলেদের নিয়ে বের হয়ে এসেছিলেন একা। দাঁড়িয়েছিলেন মানুষের পাশে। ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে ল্যান্ড মাইন ও এইডস বিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নোবেল বিজয়ী নেলসন মেন্ডেলাসহ কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৯৭ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিনেই মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি জীবনের ওপারে চলে যান।