রাখাইনে ত্রাণ সরবরাহে উগ্র বৌদ্ধদের বাধা, পুলিশের ফাঁকা গুলি

মিয়ানমারের রাখাইনে ‘জাতিগত নিধন’যজ্ঞের শিকার রোহিঙ্গাদের কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করেছে উত্তেজিত একদল উগ্র বৌদ্ধ। মিয়ানমারের সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে রয়টার্সজানিয়েছে বুধবার রাখাইনের রাজধানী সিত্তের বন্দরে প্রায় ৫০ টন ত্রাণসামগ্রী নৌকায় বোঝাই করার সময় লাঠি ও ধাতব দণ্ড হাতে নিয়ে কয়েকশ মানুষ বাধা দেয়। সে সময় ফাঁকা গুলি ছুড়ে পুলিশ ওই বিক্ষুব্ধ বৌদ্ধদের ছত্রভঙ্গ করে। কর্তৃপক্ষের দাবি, কেবল রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ যাচ্ছে এমন ধারণা থেকে এই বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে মিয়ানমারে উগ্র বৌদ্ধবাদীরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় রোহিঙ্গাবিরোধী জাতিগত শৃদ্ধি অভিযানে সম্পৃক্ত বলে জোরালো অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় বেশ ক’জন আহত এবং আটক হন।
ত্রাণ সরবরাহে পুলিশি বাধা

নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের হামলার পর গত ২৫ আগস্ট সামরিক বাহিনীর অভিযান জোরদার হয়। নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে এরইমধ্যে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন চার লাখ বিশ হাজার রোহিঙ্গা। তবে এখনও যারা রাখাইনে থেকে গেছেন, তারা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। খাদ্য ও পানির অভাব ছাড়াও প্রতিমুহূর্ত আতঙ্কে কাটাতে হচ্ছে তাদের। জাতিসংঘসহ ২০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থা সরকারি বাধাকে কারণ দেখিয়ে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। সীমিত পরিসরে সেই ত্রাণ কার্যক্রম আবারও শুরুর খবর পাওয়া গেলেও এ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সবশেষ ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রস সেখানে ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি পায়। 

বুধবার রাতে প্রায় ৫০ টন ত্রাণ নিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করে বলে জানিয়েছে সরকারি সূত্র। সেসময় প্রায় ৩০০ জনের একটি দল লাঠি ও ধাতব বস্তু নিয়ে এগিয়ে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের জন্য নিয়ে যাওয়া ঠেকাতে ওই বৌদ্ধ বিক্ষোভকারীরা নৌকা উদ্দেশ্য করে পেট্রল বোমা ছুড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মোতায়েন করা হয় ২০০ পুলিশ। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আকাশে ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এদিকে মিয়ানমারের গ্লোবাল টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায়, ওই সংঘবদ্ধ দলটি নৌকাগুলোকে আটকে রেখে রেডক্রসকে ত্রাণ নামাতে বাধ্য করার চেষ্টা করে। মিয়ানমারের তথ্য কমিটির বরাত দিয়ে তারা জানায়, পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরিস্থিতি শান্ত করতে এগিয়ে আসে বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও। কিন্তু তারপরও পাথর ও ককটেল ছুঁড়ে মারেন বিক্ষোভকারীরা।

রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ (ছবি: সংগৃহীত)

ওই ঘটনায় ত্রাণকর্মীরা কেউ আহত হননি বলে আইসিআরসির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন। মারিয়া সেসিলিয়া গোইন নামের সেই মুখপাত্র বলেন, একদল লোক নৌকার কাছ গিয়ে তারা করছে তা জানতে চায়। তখন ত্রাণকর্মীরা বলেন, তারা নিরপেক্ষভাবে সংস্থাটির জরুরি ত্রাণ সরবরাহের কাজ করছেন ।পরে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সামাল হয়। এই বিক্ষোভ মিয়ানমারে বাড়তে থাকা সাম্প্রদায়িক সংঘাতের নজির, যা সহিংসতার শিকার দুর্গত রোহিঙ্গাদের কাছে জরুরি ত্রাণসামগ্রী পাঠানো কঠিন করে তুলেছে।

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, তিনি কয়েকজনকে আহত হতে দেখেছেন। সরকারি তথ্য দফতর জানায়, এখন পর্যন্ত আটজনকে আটক করা হয়েছে। 

মিয়ানমার সরকারের দাবি, তারা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। সাধারণ মানুষের উপর নয়। ক্রাণ কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার প্রসঙ্গে রাখাইন রাজ্য সরকারের সচিব তিন মং সোই বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা ভেবেছিল, ওই ত্রাণসামগ্রী শুধু বাঙালিদের জন্য নেওয়া হচ্ছিল।’ তবে মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা ও বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, বৌদ্ধ সন্ত্রাসী ও সেনাসদস্যরা তাদের হত্যার চেষ্টা করেছে। ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন অনেক নারী। জাতিসংঘও এই ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ বলে উল্লেখ করেছে।’

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বিক্ষোভে সাম্প্রদায়িক বৈরিতা আরও বেড়ে গেছে। ফলে ত্রাণ সরবরাহ কঠিন হয়ে গেছে দাতব্য সংস্থাগুলোর। পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করেছে।