জাতিসংঘে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রত্যাশা

২৫ মার্চের গণহত্যার ভয়াবহতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব সম্প্রদায়কে এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন। অপারেশন সার্চ লাইট নামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওই গণহত্যা সংঘটিত হয়। জাতিসংঘে ওই ঘটনার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। এমন স্বীকৃতি গণহত্যাবিরোধী সম্মিলিত পদক্ষেপকে জোরালো করবে বলে মত দিয়েছেন তিনি।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভোরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। ভাষণে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি বর্ণনা করেন। বলেন,  ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ৩০ লাখ নিরীহ মানুষকে হত্যা করে । যৌন নিপীড়ন চালায়  ২ লাখ নারীর ওপর।‘ জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে চিহ্নিত ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীকে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে তারা এই হত্যাযজ্ঞ চালায়। বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে তারা দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করে।’ সাধারণ পরিষদে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সম্প্রতি ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। মূলত ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতেই ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর মাধ্যমে তারা এই গণহত্যার সূচনা করেছিল।    বাংলায় দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের কোথাও যেন আর কখনও এ ধরনের জঘন্য অপরাধ সংঘটিত না হয় তা নিশ্চিত করতে আমি বিশ্ব সম্প্রদায়কে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, ৭১-এর গণহত্যাসহ সকল ঐতিহাসিক ট্রাজেডির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমাদের এ লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ভাষণে একাত্তরের গণহত্যার বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-এর মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতের কথা জানানো হয়।‘এই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত মূল অভিযুক্তদের আমরা ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করেছি’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটি ১৪তম ভাষণ। এবারের ভাষণে গণহত্যা ছাড়াও রোহিঙ্গা ইস্যুতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বব্যাপী শান্তি রক্ষা কার্যক্রম, সন্ত্রাস বিরোধী পদক্ষেপ, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক অর্থনীতি, নারীর প্রতি সহিংসতার প্রসঙ্গ উঠে আসে তার ভাষণে।