এইচআরডব্লিউ এর প্রতিবেদন

এখনও সীমান্তে নিষিদ্ধ স্থলমাইন পুঁতে রাখছে মিয়ানমার

মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এখনও বাংলাদেশ সংলগ্ন সীমান্তে স্থল মাইন পুঁতে রাখছে বলে প্রমাণ হাজির করেছে  মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এইচআরডব্লিউ। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ, স্বাধীন সংবাদকর্মীর প্রতিবেদন আর এ সংক্রান্ত বিভিন্ন আলোকচিত্রের  তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা বলছে, গত কয়েক সপ্তাহেও অ্যান্টি-পার্সোনেল মাইন ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে। এই মাইনের ব্যবহার আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ।  মিয়ানমারকে অবিলম্ব ওই নিষিদ্ধ অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করে ১৯৯৭ সালের মাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে সই করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওই আন্তর্জাতিক সংস্থা

রোহিঙ্গা সংকটউল্লেখ্য, নিষিদ্ধ অ্যান্টি-পার্সোনেল মাইন যুদ্ধক্ষেত্রে শুধুমাত্র মানুষ নিধনের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা ট্যাংক-বিধ্বংসী মাইন থেকে আলাদা। মানুষের পায়ের চাপ পড়লেই মাটিতে পেতে রাখা এ মাইন বিস্ফোরিত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে সংস্থাটি বলছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সীমান্তের মূল পয়েন্টগুলোতে ল্যান্ডমাইন পুঁতেছে। এমনকি উত্তর রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে হামলার আগে সেখানকার রাস্তায়ও ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সৈন্যরা যে মাইন পাতছে – সেটাও তারা দেখেছেন। বিশেষ করে বুথিডং, টং পিও লেট ইয়ার সীমান্ত, এমনকি তারা নো ম্যানস ল্যান্ডেও মাইন পুঁতে রাখতে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন

পিএমএন-ওয়ান নামের অ্যান্টিপার্সোনাল মাইন ব্যবহারের ছবি তাদের হাতে এসেছে। ওই ছবিগুলো থেকে মাইনগুলোর প্রস্তুতকারক দেশ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি এইচআরডব্লিউ। তবে এগুলোকে দেখে সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়কার তাদের নংশাকৃত চীনা কিংবা বার্মিজ মাইনের মতো মনে হয়েছে।

বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ল্যান্ডমাইনের আঘাতে এ পর্যন্ত পাঁচজন নিহত এবং ১২জন আহত হয়েছে। বলা হচ্ছে, মূলত বাংলাদেশের তমরু সীমান্ত দিয়েই ল্যান্ডমাইনে আহত রোহিঙ্গারা বেশি ঢুকছে। বিজিবির কক্সবাজারের অধিনায়ক লে: কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, শুরুতে কয়েকদিন প্রায় রোজই হাঁটুর নিচ থেকে বা পা উড়ে গেছে এমন মানুষ পেয়েছেন তারা। এই আহতদের দেখে বোঝা গেছে যে, স্থল মাইন বিস্ফোরণে তারা আহত হয়েছেন। “এপার থেকে তো আমরা দেখতে পাই না, কিন্তু আহতদের মুখে শুনে বুঝতে পারছি, কাঁটাতারের বেড়ার ২০০ গজ বা ৩০০ গজ এলাকার মধ্যে মিয়ানমারের ভেতরে তারা মাইন বিস্ফোরণে আহত হচ্ছে। এছাড়া তম্রু সীমান্ত, চাকমাকাটা এলাকা এবং নারায়নচর এলাকাগুলো থেকে আমরা এমন অনেক আহত পেয়েছি।” লে: কর্নেল খান বলেন, গত কয়েকদিনে এই সংখ্যা কমেছে। তবে এর আগে এধরনের খবরে মিয়ানমারের কাছে প্রতিবাদ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।

এদিকে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জালালউদ্দিন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, তারা হাসপাতালে এ পর্যন্ত শতাধিক আহত রোহিঙ্গার চিকিৎসা দিয়েছেন যাদের মধ্যে অন্তত ১৫ ২০জন স্থল মাইনে আহত হয়েছেন। “আমারা যেসব রোগী পেয়েছি, তার মধ্যে যারা বার্ন ইনজুরি নিয়ে এসেছে, তারা বোমা এবং মাইন বিস্ফোরণের কারণে আহত হয়েছেন। এমন অনেক পেয়েছি এবং আরো আসছে।”

রোহিঙ্গাদের নির্মূলের জন্য ল্যান্ডমাইন বসানোর ঘটনাকে ‘বর্ণনার অতীত’ ‘হৃদয়হীন কাজ’ বলে অভিহিত করে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অবিলম্বে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে অ্যান্টি-পার্সোনেল ল্যান্ডমাইন ব্যবহার বন্ধ করে, ১৯৯৭ সালের মাইন নিষিদ্ধ সংক্রান্ত অটোয়া চুক্তিতে যোগ দেবার আহ্বান জানিয়েছে।