ইরান-ইরাক সীমান্তে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪৫

nonameইরান ও ইরাকের উত্তর সীমান্তে আঘাত হানা ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ পর্যন্ত পাওয়া খবরে ৪৪৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা জানা গেছে। ৭ দশমিক ৩ মাত্রার শক্তিশালী এ ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন সাত হাজার ১০০ জনের বেশি।

ইরানের স্থানীয় সময় রবিবার রাত ৮টা ১৮ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর মূল কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার গভীরে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ভূমিকম্প কবলিত এলাকাগুলোতে জোরেশোরে ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুররেজা রাহমানি ফাজলিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

ভূমিকম্পের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, তা তুরস্ক, আরমেনিয়া, কুয়েত, জর্দান, লেবানন, সৌদি আরব, বাহরাইন ও কাতার থেকেও অনুভূত হয়।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানিয়েছে, কুর্দিদের শাসিত সুলাইমানিয়া শহর থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে হালাবজার কাছে ভূমিকম্প প্রচণ্ড আঘাত হেনেছে।

ইরাকের রাজধানী বাগদাদ থেকে ভূমিকম্পের কেন্দ্রের দূরত্ব অনেক হলেও সেখানেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এতে বাগদাদের ভবনগুলো প্রচণ্ডভাবে কেঁপে ওঠে। অনেকে একে প্রথমে বিস্ফোরণ বলে মনে করলেও কম্পন এক মিনিটের বেশি সময় স্থায়ী হওয়ায় পর একে ভূমিকম্প বলে বুঝতে পারে।

ভূমিকম্পের পর কয়েক দফা আফটার শক হয়েছে। ইরানের কুর্দিস্তান, কেরমানশাহ, ইলাম, খুজিস্তান, হামেদান, পশ্চিম আজারবাইজান, পূর্ব আজারবাইজান, লোরেস্তান, তেহরান, কাজভিন, যানজান ও কোম প্রদেশে এমন কম্পন অনুভূত হয়।

ইরানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্পের ফলে কেরমানশাহ প্রদেশে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন রয়েছে এবং ইন্টারনেট সেবায় বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। এছাড়া, গ্রাম এলাকার কিছু ঘর-বাড়ি ধ্বংসের খবর পাওয়া গেছে।

কোকাব ফার্দ নামের ৪৯ বছরের এক গৃহিনী জানান, তিনি যে ভবনে বাস করতেন তা ভেঙে পড়ায় খালি হাতে দৌড়ে বের হয়ে আসেন। তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মতে বেরিয়ে আসতে পারি আমি। কিছুই আনতে পারিনি।

৫১ বছরের রেজা মোহাম্মদি জানান, প্রথম কম্পনের সময় তিনি ও তার পরিবারের লোকেরা ঘর থেকে বের হয়ে গলিতে আশ্রয় নেন। কিছুক্ষণ পর ঘরে কিছু জিনিস আনতে গেলে আফটার শকে ঘরটি ভেঙে পড়ে।

ইরানের সেনাবাহিনীর কমান্ডার মেজর জেনারেল আব্দুর রহীম মুসাভি এবং ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি'র প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ আলী জাফারি কেরমানশাহ প্রদেশের সারপোলে জাহাব শহরে পৌঁছেছেন। তারা দুজন ইরানের সামরিক বাহিনীর উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করবেন। সারপোলে জাহাব শহর ইরানে এককভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরানি পুলিশের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হোসেইন আশতারিও দুর্গত এলাকায় ছুটে গেছেন। এছাড়া, দুর্গত এলাকায় শতাধিক ডাক্তার পাঠানো হয়েছে।

ভূমিকম্প দুর্গত লোকজনকে সাহায্যের জন্য ইরানের দ্রুত উদ্ধারকারী দল অনুসন্ধানী কুকুর নিয়ে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে খুঁজে দেখা হচ্ছে ধ্বংস্তুপের নিচে জীবিত কেউ আছে কিনা। রাজধানী তেহরানের হাসপাতালগুলোকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে যাতে আহত লোকজনকে আনার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায়। আহত লোকজনকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে কমপক্ষে ৪৩টি অ্যাম্বুলেন্স, চারটি অ্যাম্বুলেন্স বাস এবং ১৩০ জন জরুরি টেকনিশিয়ানকে মেহরাবাদ বিমানবন্দরে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া, ইরানের বিমান বাহিনী আহত লোকজনকে দ্রুত হাসপাতালে আনার জন্য হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে। ইরানের স্বেচ্ছাসেবীরা আহত লোকজনের জন্য রক্ত সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।

এদিকে, ইরানের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি, ইরানে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত মাইকেল ক্লর-বার্চটোল্ড, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সমবেদনা জানিয়েছেন। সূত্র: পার্স টুডে।