জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের শূন্যস্থান পূরণ করবে ফ্রান্স!

বিশ্বের জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতি পূরণ করতে চায় ফ্রান্স। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর এখন এর নেতৃত্ব দিতে চাইছে দেশটি। জার্মানির বনে জলবায়ু সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে এমন আভাস দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক জলবায়ু বিষয়ক বিশ্লেষণধর্মী সংবাদমাধ্যম ‘ক্লাইমেট হোম নিউজ’ খবরটি জানিয়েছে

ম্যাক্রোঁ ও ডোনাল্ড ট্রাম্প
বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধের লক্ষ্যে ২০১৫ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জাতিসংঘের নেতৃত্বে একটি জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রও ওই জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। তবে তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর পাল্টে যায় পরিস্থিতি। গত জুনে বৈশ্বিক জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের সমর্থন তুলে নেয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্যারিস চুক্তির আওতায় জলবায়ু তহবিলে অংশগ্রহণ করা থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেন। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রস্তাবিত জলবায়ু তহবিলের ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। প্যারিস চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর পক্ষে ট্রাম্পের যুক্তি, এটি মার্কিন স্বার্থবিরোধী।   

‘ক্লাইমেট হোম নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়,বন জলবায়ু সম্মেলনে ২০১৫ সালে প্যারিসে অমীমাংসিত থেকে যাওয়া ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনা করেছেন ম্যাক্রোঁ। এসময় জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনে আন্তঃসরকারীয় প্যানেল (আইপিসিসি) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার করে নেওয়া দুই মিলিয়ন ডলারের পুরোটা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এছাড়া যারা জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশীদার না তাদের সঙ্গে ইউরোপের শিল্পগুলোর প্রতিযোগিতা ধরে রাখার জন্য ‘বর্ডার ট্যাক্স’ চালু করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে প্রতি টন কার্বন নিঃসরণে ৩০ ইউরো পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের চেষ্টা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

ম্যাক্রোঁর বক্তব্যের আগেই সম্মেলনের সহযোগী আয়োজক জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সরকারি চুক্তির উন্নয়ন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ কার্বণ নিঃসরণ কমানোর পর্যায়ে যেতে তার দেশকেঅনেক দূর যেতে হবে। তাই তিনি তার দেশের গাড়ি শিল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের কঠোর অবস্থান নিয়ে আছেন। এছাড়া আইপিসিসির মতো এমন তহবিল গঠন করা অর্থনৈতিকভাবে টেকসই ও বহনযোগ্য কিনা তা ভেবে দেখার জন্য বলেন। 

ক্লাইমেট হোম নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাক্রোঁকে অনেক বেশি উদ্যমী হতে দেখা গেছে। ম্যাক্রোঁ বলেছেন ‘সুস্পষ্টভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আমাদের পরিপূর্ণ বৈজ্ঞানিক তথ্য দরকার যা ক্রমাগত হালনাগাদ করতে হয়। আইপিসিসি এসব কাজের একটি অন্যতম অনুষঙ্গ। যাই হোক, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সরবরাহের নিশ্চয়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কারণে আইপিসিসি কিছুটা হুমকির মুখে পড়েছে। তবে আমি প্রস্তাব দিচ্ছি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের শূন্যস্থানপূরণ করবে আর ফ্রান্স এ সংকটের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে।’      

এক্ষেত্রেইউরোপের অন্যান্য দেশও অবদান রাখবে এমন আশাপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, ২০১৮ সালের শুরুতেই আইপিসিসি তাদের সকল প্রয়োজনীয় অর্থ হাতে পেয়ে যাবে এবং আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সমর্থন যুগিয়ে যাবে। আইপিসিসির একটি ইউরোরও ঘাটতি হবে না।’      

প্রতি টন কার্বণ নিঃসরণের জন্য ৩০ ইউরো ফি নির্ধারণে ফ্রান্স ‘কঠোর চেষ্টা’ চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে ম্যাক্রোঁ বলেন, এ দাম নির্ধারণ শিল্প কারখানায় বিনিয়োগকারীদের কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এছাড়া ইউরোপের শিল্পগুলোকে সহায়তার জন্য কিছু ক্ষেত্রে বর্ডার ট্যাক্স আরোপের কথাও বলেন তিনি।