মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা। একইসঙ্গে তারা বার্মিজ সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে বলা হয়, মিয়ানমারের সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিরা এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে।

প্রস্তাবে মিয়ানমারের বদলে ‘বার্মা’ নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এতে বেসামরিক মানুষদের ওপর নৃশংসতার নিন্দা জানানো হয়।

অযৌক্তিক বিধিনিষেধ আরোপ না করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার রোহিঙ্গাদের নিজ বাড়িঘরে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা।

এর আগে মঙ্গলবার জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র বলেন, রাখাইনে নিরাপদবোধ না করলে জোর করে সেখানে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যাবে না।

নিউ ইয়র্কে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফানে দুজারিক বলেন, শরণার্থীদের নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়া উচিত; যখন তারা নিরাপদবোধ করবে। তাদের জোর করে ফেরত পাঠানো উচিত হবে না।

একই দিন জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান জেইদ রা’দ আল হুসেইন মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশনে যথাযথ সময়ের আগে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সতর্ক করেন। তিনি জানান, পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো উচিত নয় বলে মনে করছে কমিশন। তার ভাষায়, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত রাখাইন পরিস্থিতি যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ না করা যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের ফেরত পাঠানো ঠিক হবে না।’

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ, গ্রেনেড ব্যবহার, খুব কাছাকাছি অবস্থান থেকে গুলিবর্ষণ, ছুরিকাঘাত, পিটিয়ে হত্যা এবং ঘরে মানুষ থাকা অবস্থায় তা জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন রাদ আল হোসেন। তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সমন্বয়ে গঠিত একটি জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের এমন পরিস্থিতির শিকার হওয়ার ঘটনাকে গণহত্যা ছাড়া আর কী বলা যাবে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন শুরু হওয়ার পর সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের খুন-ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ এই সেনা অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছে। সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, আল জাজিরা।