জেরুজালেম ইস্যুতে ওআইসি সম্মেলনে অনুপস্থিত শীর্ষ সৌদি নেতৃত্ব

জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির বিরুদ্ধে তুরস্কের ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত ওআইসি’র জরুরি সম্মেলনে অংশ নেয়নি সৌদি আরবের শীর্ষ নেতৃত্ব। সৌদি বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ, ক্ষমতাধর যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান এমনকি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেও সম্মেলনে দেখা যায়নি। এরইমধ্যে জেরুজালেম প্রশ্নে ইরানের ইসরায়েলবিরোধী মন্তব্যের জবাবে তেহরানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে সৌদি জোটের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলের গোয়েন্দা বিষয়ক মন্ত্রী।

nonameওআইসি’র এই জরুরি সম্মেলনে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ৫৭টি মুসলিম দেশ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও একই রকম সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। সম্মেলনে বাংলাদেশ, কাতার, কুয়েত, জর্ডান, ইরান, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। মুসলিম দেশগুলোর বাইরে ফিলিস্তিনিদের ন্যায়সংগত আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে বৈঠকে অংশ নেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। তবে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে শীর্ষ নেতৃত্বের বদলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়।

সৌদি আরবে ওআইসি'র সদরদফতর অবস্থিত। অথচ সংস্থাটির জরুরি সম্মেলনে তাদের শীর্ষ নেতৃত্বের অনুপস্থিতি অনেককেই অবাক করেছে। রিয়াদের ঘনিষ্ঠ মিত্র মিসরের প্রেসিডেন্টের বদলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে যোগ দেন।

সমালোচকরা বলছেন, সৌদি আরবের সংকেত পেয়েই জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এ কারণেই এ ইস্যুতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অনুপস্থিত থেকেছে শীর্ষ সৌদি নেতৃত্ব।

এদিকে সৌদি সংবাদমাধ্যম এলাফ’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেরুজালেম ইস্যুতে ইসরায়েলের সমালোচকদের একহাত নিয়েছেন ইসরায়েলের গোয়েন্দাবিষয়ক মন্ত্রী ইয়িসরায়েল কাটজ। জেরুজালেম প্রশ্নে ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহ’র ইসরায়েলবিরোধী মন্তব্যের জবাবে তেহরানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে তিনি সৌদি জোটের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে তেল আবিব সফরের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলেও জানান কাটজ।

ফিলিস্তিনের জন্য আন্দোলন

ইসরায়েলের গোয়েন্দাবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘হিজবুল্লাহকে সহ্য করবে না ইসরায়েল। আমি শুনেছি এক সৌদি মন্ত্রী হিজবুল্লাহকে দক্ষিণ লেবাননে তাদের গুহায় ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আর আমি আপনাদের বলছি লেবাননকে আমরা প্রস্তর যুগের সময়কার পরিস্থিতিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাব।’

সৌদি আরবকে আরব বিশ্বের নেতা হিসেবে উল্লেখ করে কাটজ বলেন, রিয়াদের উচিত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের ভূমিকা পালন করা।

উল্লেখ্য, ৬ ডিসেম্বর বুধবার জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরায়েলের মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতির কথাও জানান তিনি। ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই বিক্ষোভে নামেন ফিলিস্তিনিরা। ওই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ৮ ডিসেম্বর থেকে ইন্তিফাদা বা সর্বাত্মক প্রতিরোধের ডাক দেয় ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সংগঠন হামাস। ট্রাম্পের ঘোষণার বিরুদ্ধে ১৩ ডিসেম্বর ইস্তানবুলে ওআইসি’র জরুরি সম্মেলনে আহ্বান করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। এই সম্মেলন থেকে মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে ফিলিস্তিনের পাশে থাকার ঘোষণা দেয়। সূত্র: পার্স টুডে, ভয়েস অব আমেরিকা।