মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব ঠেকাতে জোট গড়বে যুক্তরাষ্ট্র

 

 

ইরানের বিরুদ্ধে ‘সংঘাতের আগুনকে উস্কে দেওয়া’র অভিযোগ তুলে মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির প্রভাব ঠেকাতে আন্তর্জাতিক জোট গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি। ‘ইরানের তৈরি অস্ত্রের অবশিষ্টাংশ’ দাবি করে কিছু বস্তু দেখিয়ে ওয়াশিংটন ডিসির কাছের একটি বিমান ঘাঁটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন তিনি।

জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান ও তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবের মধ্যে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বাগযুদ্ধের মধ্যেই হ্যালি এমন মন্তব্য করলেন। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট হুথিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে যা ইয়েমেনে মানবিক সংকট তৈরি করেছে। গত মাসে হুথি বিদ্রোহীরা রিয়াদের বিমানবন্দর লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর সৌদি সরকার ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর অভিযোগ আনে। ১ ডিসেম্বর হুথিদের কাছ থেকে আসা দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার দাবি করে দেশটি।

নিকি হ্যালি দাবি করেন, ইরানের ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের কাছে পাঠানো হচ্ছে, আর তারা তা ব্যবহার করছে। এর মাধ্যমে তেহরান আন্তর্জাতিক চুক্তি ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে নিকি হ্যালি বলেন, ‘এখানে ইরানের অবৈধ অস্ত্রের বিস্তার ও আমাদের অংশীদারদের ওপর সরাসরি সামরিক হামলার বাস্তব প্রমাণ রয়েছে।’ সে সময় কোনও কিছু নির্দিষ্ট না করেই হ্যালি বলেন, ‘ইরান ও তাদের কর্মকাণ্ড ঠেকাতে জোট গঠন করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।’

হ্যালি দাবি করেন, উদ্ধারকৃত অস্ত্রের টুকরোগুলো ইয়েমেন থেকে তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদি আরবের দিকে ছোড়া হুথি বিদ্রোহীদের ক্ষেপণাস্ত্র থেকে পাওয়া গেছে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইরানে তৈরি বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও দাবি করেন তিনি। নিকি হ্যালি বলেন, ‘এগুলো ইরানের তৈরি, ইরানের পাঠানো আর ইরানেরই দেওয়া’। তবে আল জাজিরা রাষ্ট্রদূতের ওই বক্তব্য যাচাই করতে পারেনি বলে জানিয়েছে।

এদিকে রয়টার্সের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, একই দিন হুথি বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি অস্বীকার করে ইরান দাবি করেছে, হ্যালির দেখানো অস্ত্রগুলো ‘ভুয়া’। এক টুইট বার্তায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ নিকি হ্যালির পাশাপাশি জর্জ বুশের আমলে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত কলিন পাওয়েলের ছবি দেন। এরপর লিখেছেন, ‘যখন জাতিসংঘে ছিলাম তখন এই দৃশ্য দেখেছিলাম আর এখন আবার তা শুরু হয়ে গেছে।’ ইরাকের কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র আছে- কলিন পাওয়েলের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ২০০৩ সালে দেশটিতে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে পরে অভিযোগটি প্রমাণিত হয়নি।

সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সির বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, সৌদি আরব হ্যালির এমন মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে। সৌদি আরব একে ইরানের আন্তর্জাতিক চুক্তি ও শিষ্টাচার লঙ্ঘনের প্রতি নিন্দা হিসেবে উল্লেখ করেছে। সৌদি জোটের আরেক সদস্য আরব আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রে সরবরাহ করা প্রমাণে ‘কোন সন্দেহ নেই’ বলে উল্লেখ করেছেন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক টুইট বার্তায় তারা একে ‘ইরানের জাতিসংঘ প্রস্তাবের লঙ্ঘন করা ও মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র বিস্তার ও পাচারের ভূমিকা’র প্রমাণ বলে উল্লেখ করেছে। এসময় দেশটি ইরানের হুমকি মোকবিলায় আরও জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানায়।