কর্পোরেট কর কমিয়ে ব্যক্তিগত কর বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

কর্পোরেট কর ১৪ শতাংশ কমিয়ে ব্যক্তিগত কর দুই শতাংশ বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এটা হবে দেশটির কর ব্যবস্থায় বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। শুক্রবার এ সংক্রান্ত যৌথ খসড়া বিল প্রকাশ করেছে কংগ্রেসের উভয় কক্ষের রিপাবলিকান দলীয় আইনপ্রণেতারা। নতুন পরিকল্পনায় কর্পোরেট কর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২১ শতাংশ এবং ব্যক্তিগত কর ৩৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৯ দশমিক ৬ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। শনিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

nonameযুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন দল রিপাবলিকান পার্টির আইনপ্রণেতাদের এমন প্রস্তাবেরে সমালোচনা করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে দেশটিতে ধনী-গরিবের ব্যবধান আরও বাড়বে।

নির্বাচনি প্রচারণায় কর ব্যবস্থা পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি আসন্ন বড়দিনের আগেই বিলটিকে আইনে পরিবর্তন করতে চান। তবে ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, এভাবে কর কর্তনে বিত্তশালীদের জন্য সুবিধা হলেও মধ্যবিত্তদের কোনও লাভ হবে না।

কর ব্যবস্থা বিষয়ক নির্দলীয় যৌথ কমিটি শুক্রবার বলেছে, এ উদ্যোগের ফলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশটির অভ্যন্তরীণ ঋণ এক লাখ ৪০ হাজার কোটি থেকে ২০ লাখ কোটি ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে।

যুক্তরাষ্টের সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে রিপাবলিকানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। আগামী সপ্তাহে বিলটি পাসের পক্ষে তারা ভোট দেবে। শুক্রবার কয়েক ঘণ্টার আলোচনা শেষে দুই কক্ষের সদস্যরা বিলটির খসড়া চূড়ান্ত করেন। শিশু ট্যাক্স কর্তনের কথা বলে সিনেটর ম্যাক্রো রুবিও বিলটি সমর্থন করেন। আর মূল বিলটির বিরোধিতাকারী সিনেটর বব করকেট বলেন, সংরক্ষণ ছাড়া তিনি খসড়া বিলটিরও বিপক্ষে থাকবেন।

হাউস অব ওয়েস অ্যান্ড মিনস কমিটির রিপাবলিকান চেয়ারম্যান কেভিন ব্রাডে জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি খুবই উল্লসিত। ‍তিনি বলেন, ৩১ বছর ধরে অনেক পরিশ্রমের পর অবশেষে এ নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছি।

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের ট্যাক্স বিলের বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমতে শুরু করেছে। বিলটি পাস হলে রিপাবলিকান পার্টি বিশেষ করে বড় বড় ব্যবসায়ী দাতারা খুশি হবে। তবে প্রশ্ন হলো, বিল পাসে এই সফলতা প্রেসিডেন্টের সমর্থন কমে যাওয়া বা আগামী বছর মধ্যবর্তী মেয়াদে কংগ্রেস নির্বাচনে রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা জনমত ঠেকাতে পারবে কিনা। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ট্যাক্স বিলের অজনপ্রিয়তা সাধারণ মানুষের কাছে দলের অবস্থানের খুব বেশি পরিবর্তন আনবে না। দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় স্বার্থে কী পরিবর্তন আসবে সেই বিষয়টি ছাড়াও কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোর বিষয়টি সামগ্রিকভাবে সাধারণ আমেরিকানদের মনোযোগ কেড়েছে।

রিপাবলিকানরা এখন তাদের ফুলে ফেঁপে উঠা অর্থনীতির পুরো কৃতিত্ব নিতে পারবে। তবে মাত্র ১১ মাস পর জনগণ নির্ধারণ করবে তাদের ক্ষমতায় থাকা উচিৎ কিনা।

প্রস্তাবিত নতুন বিলটির সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘের চরম দারিদ্র্য বিষয়ক দূত ফিলিপ আলস্টোন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এর ফলে সামাজিক অসমতা আরও বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ট্যাক্স বিল পাসের জন্য খুব চেষ্টা করছে। যদি এটি পাস হয় তাহলে সমাজে নাটকীয়ভাবে অসমতা বাড়বে বলেই প্রতীয়মান হয়।