বাজার নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে কিংবা উৎসবের উছিলায় অথবা চাহিদা আর যোগানের সামঞ্জস্যহীনতার কারণে প্রতি বছর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মানুষের জন্য উৎপাদিত মোট খাবারের এক তৃতীয়াংশ। একই সময়ে বিশ্বজুড়ে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে ৮০ কোটি মানুষ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা এফএওর সবশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এই পরিসংখ্যান জানা গেছে। এদিকে এফএও-এর সাম্প্রতিক এক প্রচারণায় বড়দিন-বর্ষবরণসহ বিভিন্ন উৎসবের সঙ্গে অপচয় বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে। সংস্থাটি বরাবরই বলে আসছে, খাদ্য সংকটের কারণ সম্পদের স্বল্পতা নয়, অপচয়।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের আরেকটি বিশেষায়িত সংস্থা আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (আইএফএডি) খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি শীর্ষক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এই তথ্য ২০১৪-১৬ সালের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে প্রণীত ওই প্রতিবেদনে বলা হয় চলতি বছরে বিশ্বের ১১ শতাংশ মানুষের ক্ষুধা বেড়েছে। ওই রিপোর্ট প্রকাশের পর সংস্থাটির প্রধান গিলবার্ট হুংবো বলেছিলেন, ‘সম্পদের স্বল্পতা নয়, খাদ্যের অপচয়ই বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার প্রধান কারণ।’
মানুষের জন্য উৎপাদিত খাবারের মধ্যে অপচয় হয় ১৩০ কোটি টন (মোট উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশ) খাবার। বিশ্বের সামগ্রিক উৎপাদিত খাদ্যশস্যকে বিবেচনায় নিলে এই অপচয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় অর্ধেক। এফএও-এর তথ্য অনুযায়ী উৎসবের দিনগুলোতে অপচয়ের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়।
পরিসংখ্যান বলছে, সবচেয়ে বেশি খাবার নষ্ট হয় পশ্চিমা দেশগুলোতে। সেখানকার ধনী দেশগুলোর ক্রেতারা প্রতিবছর ২২ কোটি ২০ লাখ টন খাবার অপচয় করে থাকে। পুরো সাব সাহারান অঞ্চলে যে পরিমাণ খাবার উৎপাদিত হয়, পশ্চিমা দেশগুলোর অপচয়ের পরিমাণ তার সমান।
এফএও-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইউরোপ আর উত্তর আমেরিকার ক্রেতারা মাথাপিছু বার্ষিক ৯৫ থেকে ১১৫ কেজি পর্যন্ত খাবার অপচয় করে থাকেন। আফ্রিকার সাব সাহারা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ক্রেতাদের ক্ষেত্রে এই বার্ষিক পরিমাণ ৬ থেকে ১১ কেজি। অপচয়ের আরও ভয়ঙ্কর চিত্র রয়েছে। এফএও-এর তথ্য অনুযায়ী এই বিপুল অপচয়ের বিপরীতে পৃথিবীর ৭৯ কোটি ৫০ লাখ মানুষ প্রচণ্ড অপুষ্টিতে ভুগছে।
অবশ্য পশ্চিমা দেশগুলোতেও বিপুল সংখ্যক মানুষ না খেয়ে থাকতে বাধ্য হয়। চ্যারিটি সংগঠন ডব্লিউআরএপি এর তথ্যমতে, যুক্তরাজ্যে এককভাবেই ৮৪ লাখ মানুষ একবেলা খাবার যোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে। আর সেই দেশেই প্রতিবছর কয়েকশো কোটি টাকার খাবার অপচয় হয়।
আরসব পণ্যের মতো খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রেও উৎপাদিত দ্রব্য কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে ভোক্তার কাছে পৌঁছায়। সব পর্যায়েই খাদ্য অপচয়ের নজির রয়েছে। তবে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও ওসেনিয়ার মতো পশ্চিমা দেশগুলোর ক্ষেত্রে ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর পরই বেশি পরিমাণে খাদ্য অপচয় হয়।
বড়দিন, নববর্ষসহ উৎসবের দিনগুলোতে খাবার অপচয়ের পরিমাণ বেড়ে যায়। অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলোতেও খাবার অপচয়ের ঘটনা ঘটে। আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায় ৩০ লাখ মানুষ ভর্তূকি আর মানবিক সহায়তার ওপর ভর করে বেঁচে থাকতে বাধ্য হয়। অথচ দেশটিতে বড়দিন আর নববর্ষ উপলক্ষ্যে তৈরি করা খাবারের এক তৃতীয়াংশ নষ্ট হওয়ার কথা জানিয়েছে এফএও। এই পরিসংখ্যানিক তথ্যকে উপজীব্য করে তারা বিশ্বব্যাপী একটি প্রচারণাও শুরু করেছে। শ
এফএও-এর প্রচারণায় বলা হচ্ছে, ‘খাবার উপভোগের জন্য ছুটির দিনগুলো সত্যিই খুব যথাযথ সময়। খাবার উপভোগের ব্যাপারটিকেও আমরা স্বাগত জানাই। তবে বিশ্বের এক প্রান্তে খাদ্যের অপচয় হয় বলেই অন্য প্রান্তে ক্ষুধার হাহাকার থামে না।’