জাতিসংঘের 'ফিলিস্তিনি সহায়তা তহবিলে' বরাদ্দ কমাচ্ছেন ট্রাম্প!

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার জন্য বরাদ্দ সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বছরের প্রথম সহায়তাই অর্ধেকের বেশি কমিয়ে এনেছে ট্রাম্প প্রশাসন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা দাবি করেন, এই সহায়তা পুরোপুরি বাতিল হয়ে যেতে পারে, জাতিসংঘের অন্যান্য খাতেও সহায়তা কমে আসতে পারে।

A-Palestinian-man-carries-sacks-of-flour-outside-a-United-Nations-food-distribution-center-in-Al-Shati-refugee-camp-in-Gaza-City-Dec.-6-Photo-by-Reuters-770x470ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে ওই কর্মকর্তা জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। তবে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থায় বরাদ্দকৃত ১২৫ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে মাত্র ৬০ মিলিয়ন ডলার দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরবর্তী সহায়তা পাওয়ার জন্য জাতিসংঘের এই সংস্থাটিকে তাদের কার্যক্রমে অনেক পরিবর্তন আনতে হবে। ফিলিস্তিনিদের সহায়তা করার জন্য তাদের সমালোচনা করে আসছে ইসরায়েল।  

রবিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানায়, তারা এখনও বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। হোয়াইট হাউসও এই বিষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি।

তবে ওই কর্মকর্তার দাবি, মঙ্গলবারই এই বিষয়ে ঘোষণা দিতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী রেক্স টিলারসন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস এই পরিকল্পনাকে সমর্থন দিচ্ছেন। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালির প্রস্তাব অনুযায়ী আরও সহায়তা কমানোর পক্ষেও মত রয়েছে তাদের।

শান্তি আলোচনা শুরু না করা পর্যন্ত ফিলিস্তিনে কোনও প্রকার সহায়তা দিতে রাজি নন হ্যালি। তবে টিলারস, ম্যাটিসসহ অন্যান্যরা মনে করেন, একদম সহায়তা বন্ধ করে দিলে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা তৈরি হবে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগীও জর্ডানে যেখানে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন।

জাতিসংঘে সবচেয়ে বেশি সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মোট তহবিলের ৩০ শতাংশই দেয় তারা। ত্রাণ ও সহায়তাকারী এই সংস্থাটি পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা, জর্ডান, সিরিয়া ও লেবাননের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সহায়তা করে।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর থেকে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি পালাতে বাধ্য হয়েছে। ওই অঞ্চলে এখন প্রায় ৫০ লাখ ফিলিস্তিনি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন।

জাতিসংঘের এই সংস্থায় মার্কিন সহায়তা কমানোর বিষয়টি জর্ডান ও লেবাননে চাপ সৃষ্টি করবে। চাপে পড়বে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষই। আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে গাজা উপত্যকা। ইসরায়েলি সহ কয়েকজন কর্মকর্তাদের আশঙ্কা এতে করে ফিলিস্তিনের মাঝে হামাস আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে পাশে এসে দাঁড়াতে পারে ইউরোপীয় দেশগুলোও। ২০১৬ সালে ৩৫৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্র। এই বছরও এমনটা করার কথা ছিল।

তবে ২ জানুয়ারি এক ট্রাম্পের এক টুইটে পরিস্থিতি অন্যরকম হওয়ার আভাস দেয়। পররাষ্ট্র দফতর প্রথম সহায়তা পাঠানোর জন্য এখনও আনুষ্ঠানিক নির্দেশনার অপেক্ষায় আছে। টুইটে শান্তি প্রক্রিয়ার অগ্রগতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনিদের জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ করি। কিন্তু তারা আমাদের যথাযথ সম্মান দেয় না। ফিলিস্তিনিরা শান্তি আলোচনা করতে চায় না। তাহলে আমাদের তাদের সাহায্য করার কি দরকার।?’

ট্রাম্প যদিও ফিলিস্তিনিদের প্রতি মার্কিন সহায়তা বন্ধের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তবে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাই প্রথম এর কবলে পড়বে।

টুইটের তিনদিন পর ৫ জানুয়ারি হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। পেন্টাগন ও পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারও অংশ নেন। তাদের মধ্যে একজন বাদে সবাই সহায়তা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে মত দিয়েছিলেন। সেই একজন কর্মকর্তা ছিলেন নিকি হ্যালির প্রতিনিধি। তিনি ট্রাম্পের টুইটের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, এই আর্থিক সহায়তা অবশ্যই বন্ধ করা উচিত।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, তার মন্ত্রিসভাও শরণার্থী সংস্থার কাজে সন্তুষ্ট নন। তার দাবি, শরণার্থী সংস্থা এই অঞ্চলে আরও প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করছে। তাদের অভিযোগ, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সুবিধা নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। আর সংস্থার কর্মীরাও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেন।

নেতানিয়াহু বলেন, এর চেয়ে এই অর্থ জাতিসংঘের শরণার্থী হাইকমিশনে দেওয়া উচিত। তারা সারাবিশ্বের শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করে।   ত্রাণ বন্ধে নেতানিয়াহু ও হ্যালির অবস্থান এবং টিলারসন ও ম্যাটিসের সহায়তা কমানোর পরামর্শে  ৬ কোটি ডলার সহায়তা কমানো হতে পারেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।