রোহিঙ্গা শিবিরে অবাধ প্রবেশের সুযোগ দিতে মিয়ানমারকে জাতিসংঘের আহ্বান

প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত ক্যাম্পে মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোকে অবাধে প্রবেশের সুযোগ দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে প্রত্যাবাসিত হওয়ার আগেই এ সুযোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর এক বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স খবরটি জানিয়েছে।

রোহিঙ্গা শিবির
নেপিদোতে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক শেষে ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি সই হয়। চুক্তির আওতায় ২৩ জানুয়ারি থেকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার শুরুর কতা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা পিছিয়ে যায়।  যাদেরকে ফেরত পাঠানো হবে সেই তালিকা তৈরি না হওয়া এবং তাদের জন্য ট্রানজিট ক্যাম্পও প্রস্তুত না হওয়ায় তা স্থগিত করা হয়।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর অভিযোগ, মিয়ানমারে এখনও ত্রাণ সংস্থা, মিডিয়া ও অন্য স্বাধীনধারার পর্যবেক্ষকদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করে রাখা আছে। ইউএনএইচসিআর-এর পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে আহ্বান জানানো হয় যেন তারা ‘রাখাইন রাজ্যে প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ দেয় এবং একটি বিশুদ্ধ ও টেকসই সমাধানে পৌঁছানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি করে।’

উল্লেখ্য, আদি জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয় স্বীকার করে না মিয়ানমার। তাদের নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করতে ‘বাঙালি’ হিসেবে পরিচিত করতে চায় ইয়াঙ্গুন। রোহিঙ্গাদের পালিয়ে মিয়ানমারে যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে দেখাতে চায় দেশটি। নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শুধু নাগরিকত্বই কেড়ে নেওয়া হয়নি বরং পদ্ধতিগতভাবে তাদের মৌলিক অধিকারও ছিনতাই করা হয়েছে। মুক্তভাবে চলাফেরা,কাজকর্ম এমনকি বিয়ের ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে নতুন করে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ শুরুর পর জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। চলতি বছরের শুরুতে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা হত্যার স্বীকারোক্তি দেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং। ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ১০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন তিনি। তবে বরাবরের মতোই তিনি রোহিঙ্গাদেরকে‘বাঙালি জঙ্গি’ হিসেবে তাদের আখ্যায়িত করেন।