মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তদন্তের আহ্বান

রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ মিয়ানমারের অন্যান্য নৃশংস অপরাধ তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে নির্দেশ দিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন ফোরটিফাই রাইটস। মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আগে সংগঠনটি এ আহ্বান জানায়। নিরাপত্তা পরিষদের ওই বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে পরিষদকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন।

নবজাতক কোলে নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা দম্পতি

ফোরটিফাই রাইটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথু স্মিথ বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদের এই পদক্ষেপ নিতে এখনও খুব বেশি দেরি হয়নি। চলমান জঘন্য অপরাধের জন্য মিয়ানমারের বেসামরিক ও সামরিক নেতৃত্বকে সম্পূর্ণ দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আর এ কারণেই আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ বিলম্বিত হলেও অনিবার্য হয়ে পড়েছে।’

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে পুলিশ চেকপোস্টে সহিংসতার পর বহুদিন ধরে চালানো রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যা ও ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছে। একে নিধনযজ্ঞ বলেছে যুক্তরাষ্ট্রও।

২০১৭ সালের নভেম্বরে ফোরটিফাই রাইটস ও যুক্তরাষ্ট্র হলুকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম রোহিঙ্গা নির্যাতনের একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস থেকে এক বছর বিভিন্ন প্রমাণ সংগ্রহ করে তারা। সেখানে তারা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ, ব্যাপক সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের অনেক প্রমাণ পায়। কয়েক হাজার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীর সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি তারা প্রতিবেদন তৈরি করে। সে সময় তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অকাট্য প্রমাণ পাওয়ার দাবি করে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাত থেকে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী ও শিশুরা

সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, নিরাপত্তা পরিষদে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে প্রেরণ করা ছাড়াও মিয়ানমারের ওপর বৈশ্বিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করার পদক্ষেপ নিতে হবে। আর এমন নৃশংস অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর অবরোধ আরোপ করা জরুরি।

ম্যাথু স্মিথ বলেন, ‘অমার্জনীয় অপরাধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদের পরও সংকটের জটিলতা আরও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তার ফায়দা তুলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বার বার এমন গণনৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এটা চলতে দিতে পারি না।’

201711asia_burma_rohingya_bangladesh

বর্তমানে বাংলাদেশে ৬ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে চাপ। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে একটি সমঝোতা করেছে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষণ, এখনই রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত সময় না।

ফোরটিফাইও বলেছে, ‘বর্তমান অবস্থায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে দাতা সরকার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমর্থন করা উচিত হবে না। তার পরিবর্তে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে স্বতঃস্ফূর্ত, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করাই দাতা সরকার ও জাতিসংঘের দায়িত্ব।