নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ দাবি ইরানের

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের দাবি তুলেছেন ভারত সফররত ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। তিনি বলেন, ভারতের কেন ভেটো ক্ষমতা থাকবে না? এটা অন্যায্য। শনিবার অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) নামের একটি প্রতিষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া।

হাসান রুহানিআন্তর্জাতিক সম্পর্কের নানা আঙ্গিক ও ভারতের পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে গবেষণা করে ওআরএফ। সেখানে দেওয়া বক্তব্যে ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, এখনকার সময়ে পররাষ্ট্র নীতি হচ্ছে ক্ষমতাকেন্দ্রিক। এর উদাহরণ হচ্ছে ভেটো ক্ষমতা। যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য চারটি দেশের ভোটো ক্ষমতা থাকলেও ১২০ কোটি মানুষের দেশ ভারতের কেন সে ক্ষমতা নেই? এর কারণ জাতিসংঘ গঠনের সময় তাদের (ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচ দেশ) হাতে পারমাণবিক বোমা ছিল।

এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলাপকালে জাতিসংঘের সংস্কার নিয়ে কথা বলেন ইরানি প্রেসিডেন্ট। দুই শীর্ষ নেতার বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ২০১৬ সালে তেহরান সফরে গিয়েছিলাম। এবার আপনি এখানে আসার ফলে আমাদের সম্পর্ক মজবুত হয়েছে। উভয় দেশ পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী। জ্বালানি ক্ষেত্রে আমরা অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করতে চাই। এছাড়া শতাব্দী প্রাচীন পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে ইচ্ছুক। ড. রুহানির সফরের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক জোরদার হবে।’

নরেন্দ্র মোদি বলেন, দুই দেশই আফগানিস্তানের নিরাপত্তার ব্যাপারে আগ্রহী। প্রতিবেশী দেশে আমরা সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই।
ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ইরান ও ভারতের মধ্যে শুধু ব্যবসায়িক সম্পর্ক নয় বরং ঐতিহাসিক বন্ধন রয়েছে। ভারতে বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বাস করছেন। দুই দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।

দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া’র খবরে বলা হয়েছে, ইরানি প্রেসিডেন্টের তিন দিনের ভারত সফরের অংশ হিসেবে শনিবার দুই দেশের মধ্যে নয়টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এরমধ্যে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা এবং চাবাহার বন্দর লিজের মতো বিষয়গুলোও রয়েছে।

জি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তান-চীনকে চাপে রাখতে ভারতের জন্য চাবাহারের কৌশলগত অবস্থান তাৎপর্যপূর্ণ। ফলে বন্দরটি ব্যবহার করবে ভারত। এছাড়া কৃষি খাতের মতো বিষয়গুলোতে পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে চুক্তি হয়েছে।

২০১৬ সালে ইরানি বন্দর চাবাহারের উন্নয়নে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে ভারত। ২০১৬ সালে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী, চাবাহার বন্দরের উন্নয়নে তেহরানকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছিল দিল্লি। পাকিস্তানকে এড়িয়ে আফগানিস্তানে সমুদ্রপথে যোগাযোগ সহজতর করতে ভারত ও ইরান সম্প্রতি চাবাহার বন্দরে কার্যক্রমও শুরু করেছে।

ডিপ্লোম্যাটের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে বাণিজ্য বাড়াতে ভারত ইরানে তার উপস্থিতিকে কাজে লাগিয়েছে। এর মাধ্যমে কাবুলও পাকিস্তানের বিকল্প হিসেবে ভারতকে পাচ্ছে। আর সেখানে ভারতের অবস্থান আরও শক্তিশালী হচ্ছে। ইরান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কজনিত জটিলতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ওই বিশ্লেষণে চুক্তি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ পেয়েছে।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবিশ কুমার বলেন, দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, আঞ্চলিক বিষয়, বিনিয়োগ, ব্যবসা, যোগাযোগসহ নানা বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।