যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপে বসতে আগ্রহী উত্তর কোরিয়া!

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় উত্তর কোরিয়া। রবিবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে এই কথা জানানো হয়। দেশটিতে শীতকালীন অলিম্পিকের সমাপনী অনুষ্ঠানের আগে দক্ষিণের প্রেসিডেন্ট মুন জা-ইনের সঙ্গে উত্তরের গোয়েন্দা প্রধান জেনারেল কিম ইয়ং-চোলের বৈঠকের বরাত দিয়ে এই কথা বলা হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

শীতকালীন অলিম্পিকের সমাপনী অনুষ্ঠানে ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয় গোয়েন্দা প্রধান জেনারেল কিম

খবরে বলা হয়, অলিম্পিকের সমাপনী অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্পও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সে সময় মার্কিন কর্মকর্তারা উত্তর কোরিয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাত বাতিল করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সঙ্গে উত্তর কোরিয় নেতা কিম জং উনের বোনের বৈঠক বাতিলের জেরে এমন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র বৈঠক না করলেও জেনারেল কিম ইয়ং-চোলের বৈঠক করেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জা-ইন।

জেনারেল কিমের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে চেওনান মন্দির ও ইয়েনপিয়ং দ্বীপে হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। ওই ঘটনায় দক্ষিণ কোরিয়ার ৪৬ জন নাবিক নিহত হন। এজন্য ভুক্তভোগীদের পরিবার ও দক্ষিণ কোরিয়ার কনজারভেটিভ দলের সংসদ সদস্যরা তার সফর ঠেকানোর চেষ্টা করেন। তারপরও তিনি স্বপরিবারে দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছালে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার তাকে স্বাগত জানায়।

বৈঠকের বরাত দিয়ে দক্ষিণের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপে বসতে ‘খুবই আগ্রহী’ বলে জানিয়েছেন জেনারেল কিম। এতে আরও বলা হয়, আন্তঃকোরিয়া সংলাপ ও উত্তর কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য একত্রে কাজ করতে রাজি হয়েছেন তারা ।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞাকে ‘যুদ্ধের শামিল’ বলে উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর দক্ষিণের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে এই কথা বলা হয়েছে। পিয়ংইয়ং এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। কোনও পূর্বশর্ত ছাড়া সংলাপে বসতে এর আগেও কয়েকবার আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, পরমাণু কার্যক্রম বাদ দিতে কার্যকর পদক্ষেপই হবে এই আলোচনার পূর্বশর্ত।

গত শীতকালীন অলিম্পিকে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার খেলোয়াড়রা এক পতাকার নিচে অংশ নিয়েছেন। তারা আইস হকিতে যৌথ দলও গঠন করেছিল। ওই সময় উত্তর কোরিয়া মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও কিম জন উনের বোনের মধ্যে একটি বৈঠক বাতিল করে। যুক্তরাষ্ট্র একে অস্বাভাবিক বললেও উত্তর কোরিয়া তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। 

এদিকে উত্তর কোরিয়ার ওপর সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞায় কাজ না হলে ভয়াবহ পরিণতি হবে বলে গত শুক্রবার সতর্ক করে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞা কাজ না করলে আমাদের দ্বিতীয় উপায় নিয়ে ভাবতে হবে। আর দ্বিতীয় উপায় হতে পারে খু্ব কঠিন বিষয়। এটা বিশ্বের জন্য খুব খুব দুর্ভাগ্যজনক হতে পারে।’ তবে দ্বিতীয় উপায়ে কী তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি ট্রাম্প।

১৯৫০ সালের যুদ্ধের পর থেকে কোরিয় উপদ্বীপ বিভক্ত হয়ে আছে। তারা কোনও শান্তি চুক্তিও করেনি। এজন্য দুই কোরিয়ার পুনর্মিলনের এই চেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্কের মধ্যে ঢুকতে উত্তরের একটি পদক্ষেপ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সম্পর্কের সর্বশেষ উন্নতি এই অঞ্চলের ‍উত্তেজনা শেষ করবে না। বিশেষ করে গত বছর উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর তা আরও ঘনীভূত হয়েছে।