ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে মার্কিন ইস্পাতকর্মীরা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে দেশটির ইস্পাত শিল্পের কর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন গত নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন এমন কর্মীরাও। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যবসায়ী ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন ৪০ বছরের ইস্পাতকর্মী মিক ল্যাং। প্রত্যাশা ছিল এই ব্যবসায়ী যুক্তরাষ্ট্রের ইস্তাত শিল্পে এক যুগের সূচনা করবেন। এখন উল্টো নিজের চাকরি নিয়েই ঝুঁকিতে রয়েছেন এই ট্রাম্প সমর্থক।

দুনিয়ার বৃহত্তম ইস্পাত আমদানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন ইস্পাত আমদনি করে দেশটি। তবে সম্প্রতি টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রে ইস্পাত আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ১০ শতাংশ কর আরোপের পরিকল্পনার কথা জানান ট্রাম্প। ওই টুইটের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই দুইটি খাতে উল্লিখিত মাত্রার শুল্ক আরোপের ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ১৫ দিনের মধ্যে আদেশটি কার্যকর হবে। প্রতিবেশী কানাডা ও মেক্সিকোকে আপাতত এর বাইরে রাখা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত আদেশে স্বাক্ষরের পর ট্রাম্প বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় বিদেশি পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার ভাষায়, ‘নিজ দেশের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে আমরা আমাদের জিনিস তৈরি করতে চাই। বিদেশ থেকে এটি আমদানি করা শুধু অর্থনীতির জন্যই বিপর্যয় নয়; বরং এটি নিরাপত্তার জন্যও বিপর্যয়কর।’ ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জার্মানি, তুরস্ক ও ব্রাজিল। চীনের পক্ষ থেকে অবশ্য এরইমধ্যে পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি এসেছে। নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এসেছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকেও।

noname

তিন প্রজন্ম ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন ৫৯ বছরের ল্যাঙ্গ। বলেন, এজন্য আমি তাকে ভোট দেইনি। ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছি, কারণ আমি মনে করেছিলাম পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে।

ল্যাঙ্গ-এর পুত্রও ওয়েস্টার্ন পেনসিলভানিয়ার মার্কার কাউন্টির একই ইস্পাত কারখানায় চাকরি করছেন। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই কাউন্টিতে জয় পেয়েছিলেন ট্রাম্প। রিপাবলিকান কৌশলবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এই কাউন্টির ভোটারদের প্রভাবিত করবে।

ইস্পাত খাতের কর্মীদের মধ্যে হতাশা কাজ করলেও ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে খুশি ইউএস স্টিল কর্প (এক্স.এন) এবং একে স্টিল হোল্ডিং কর্প (একেএস.এন)-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। এরইমধ্যে আমদানি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। নিজেদের উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়েও আশাবাদ জানিয়েছে দুই প্রতিষ্ঠান। তবে এর বিপরীত প্রতিক্রিয়া এসেছে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা রয়েছে এমন বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে।

noname

রাশিয়াভিত্তিক ইস্পাত খাতের বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠান এনএলএমকে। প্রতিষ্ঠানটির যুক্তরাষ্ট্র ইউনিটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিলার বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের ফলে পণ্যের দাম ২৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। কিন্তু ক্রেতারা যদি এই বাড়তি দাম দিতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে তার প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক হাজার ২০০ কর্মী চাকরি হারাবেন।

মিলার বলেন, শুল্ক আরোপের এই সিদ্ধান্তের ফলে তার প্রতিষ্ঠান পেনসিলভানিয়া ও ইন্ডিয়ানাতে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনাও স্থগিত রাখতে বাধ্য হচ্ছে।

এনএলএমকে-এর মতো অন্যান্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও শুল্ক আরোপের প্রভাব পড়বে। ইউনাইটেড স্টিলওয়াকার্স ইউনিয়নের একজন নেতা টেরি ডে বলেন, ১৯৯০ সালের শাটডাউন ছিল এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্য একটি বড় ধাক্কা। এর প্রতিক্রিয়ায় তখন আত্মহত্যা ও বিবাহ বিচ্ছেদের মতো ঘটনার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।