বহিষ্কৃত হতে যাচ্ছেন শতাধিক রুশ কূটনীতিক, প্রতিশোধের হুঙ্কার মস্কোর

যুক্তরাজ্যে সাবেক রুশ গুপ্তচর ও তার মেয়েকে নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কূটনীতিক বিতাড়নের মুখে পড়েছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা মিলে রাশিয়ার শতাধিক কূটনীতিককে বহিষ্কার করতে যাচ্ছে। এমন বিশাল সংখ্যায় রুশ কূটনীতিক বিতাড়নের ঘটনা ইতিহাসে এবারই প্রথম। ২০টিরও বেশি দেশ যুক্তরাজ্য  ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। আর রাশিয়া এই ‘উস্কানিমূলক আচরণ’-এর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

_100570053_gettyimages-931433254-1

নার্ভ এজেন্ট হামলার শিকার সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইউলিয়া এখনও হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন। ইইউ নেতারা গত সপ্তাহে এ ঘটনায় রাশিয়াকে দায়ী করেছিল। তবে রাশিয়া প্রথম থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সরকার আমাদের মহাদেশ ও এর বাইরে আমাদের মূল্যবোধ ও স্বার্থের ওপর হামলা চালিয়েছে। আর সার্বভৌম ইউরোপিয়ার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য ইইউ ও ন্যাটোর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই হুমকি মোকাবিলা করবে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনও দেশটির মিত্রদের এমন ‘অভূতপূর্ব আন্তর্জাতিক পদক্ষেপে’র প্রশংসা করেছেন।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এসব পদক্ষেপ ‘মুখোমুখি অবস্থান’ চালিয়ে যাওয়ারই বহিঃপ্রকাশ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, কোনও কিছু না বলেই একদল দেশের এমন অবন্ধুত্বসুলভ আচরণ এড়িয়ে যাওয়া হবে না। আমরা এর জবাব দেবো।

মাসের শুরুতেই ২৩ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয় যুক্তরাজ্য। পরে আরও বেশ কয়েকটি দেশ রুশ কূটনীতিকদের বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ৬০ জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করবে। ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্স, জার্মানি ও পোল্যান্ড চারজন করে, চেক রিপাবলিক ও লিথুয়ানিয়া তিনজন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও স্পেন দুইজন করে, ইসতোনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, ফিনল্যান্ড, হাঙ্গেরি, লাতভিয়া, রোমানিয়া ও সুইডেন একজন করে কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। এর বাইরে ইউক্রেন ১৩ জন, কানাডা চারজন, আলবেনিয়া ও অস্ট্রেলিয়া দুইজন করে এবং নরওয়ে ও মেসিডোনিয়া একজন করে কূটনীতিক বহিষ্কার করবে।

আইসল্যান্ড কূটনীতিক বহিষ্কার না করলেও রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের সংলাপ স্থগিত করেছে। এছাড়া আসন্ন ফুটবল বিশ্বকাপেও দেশটির নেতারা রাশিয়া সফর করবে না বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্য ঘোষণা দিয়েছে, আগামী জুন মাসে শুরু হতে যাওয়া রাশিয়া ফুটবল বিশ্বকাপে দেশটি কোনও মন্ত্রী বা রাজপরিবারের কোনও সদস্যকে সেখানে পাঠাবে না। 

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন

ইইউ জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যকে সমর্থন ও বিষপ্রয়োগের নিন্দা করলেও অস্ট্রিয়া, গ্রিস ও পর্তুগাল রুশ কূটনীতিক বহিষ্কারের ব্যাপারে কিছু জানায়নি। ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, সরাসরি বৈঠক করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো রুশ কূটনীতিক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে,  ৪ মার্চ রাশিয়া সামরিক পর্যায়ের নার্ভ এজেন্ট ব্যবহার করে একজন ব্রিটিশ নাগরিক ও তার মেয়েকে হত্যার চেষ্টা করেছে। এই হামলায় আমাদের মিত্র যুক্তরাজ্যের অগণিত নিষ্পাপ জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। ইতোমধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজনকে গুরুতর আহত করেছে। এটা রাসায়নিক অস্ত্র চুক্তির ভয়ানক লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

যুক্তরাষ্ট্র ওয়াশিংটনে রুশ দূতাবাসের ৪৮ কূটনীতিক ও নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে নিযুক্ত ১২ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। এছাড়া সেটলে রুশ দূতাবাস বন্ধেরও নির্দেশ দিয়েছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, শতাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে কূটনৈতিক পদে নিয়োগ দিয়ে রেখেছে রাশিয়া। বহিষ্কারের পরও সেখানে অনেক রুশ কর্মকর্তা থেকেই যাবে। রুশ কূটনীতিকদের গোয়েন্দা বলেই অভিহিত করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র।