সিরিয়ায় যেভাবে হামলা চালাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা

এক টুইট বার্তায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারে যু্ক্তরাষ্ট্র। তবে আসলেই কি হামলা চালাতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র? হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সব ধরনের ব্যবস্থার কথাই ভাবছে তারা। এখনও চূড়ান্ত হয়নি সামরিক অভিযানের বিষয়। ফ্রান্স ও ব্রিটেনকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যদি সামরিক অভিযান শুরু করে তবে প্রথমে তারা সিরিয়ার অস্ত্র ভাণ্ডার বা রাসায়নিক কারাখানাতেই হামলা চালাবে। এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

Trump-Putin-Assad-678x381

গত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত হামলায় পূর্ব ঘৌটার বেশ কিছু মানুষের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উদ্ধারকর্মী ও চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে বিবিসি দৌমা শহরে ৭০ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে। বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস হামলায় তারা নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হোয়াইট হেলমেট। বেশ কয়েকটি চিকিৎসক, পর্যবেক্ষক ও অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপ ওই বিষাক্ত রাসায়নিক হামলার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে। পরে রাসায়নিক গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮৫ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে সিরীয় সরকার ও রাশিয়া দৌমায় কোনও ধরনের রাসায়নিক হামলার কথা অস্বীকার করেছে।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ব্রিটেন জানায়, এমন ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে জবাব দেবেন তারা। আসাদের এই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার বন্ধ করতে এর কারখানায় হামলা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এএফপি’র মতে, এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এমন ঘটনায় বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এছাড়া আসাদের বিমানঘাঁটিতেও হামলা চালাতে পারে ‍যুক্তরাষ্ট্র। বিলম্বের কারণে হয়তো সেখান থেকে বিমান সরিয়ে নিয়েছে তারা। ওয়াশিংটনের স্টাডি অব ওয়ার ইনস্টিটিউটের সিরিয়া বিষয়ক গবেষক জেনিফার কারাফেলা বলেন, দামেস্কর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি সামরিক বিমানবন্দরেই হামলার সম্ভাবনা বেশি। এখান থেকেই বিমান গিয়ে রাসায়নিক হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

232545

গত বছর সিরিয়ায় সারিন গ্যাস হামলার পর তাদের বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের নির্দেশে তখন ৫৯টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। তবে সরাসরি হামলার পরও সিরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করেননি ট্রাম্প।

পরে আসাদ বাহিনীর ওপর একাধিক রাসায়নিক হামলার অভিযোগ উঠেছে। কারফেলা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ইরান সমর্থিত সেনাদের ওপর কিংবা রুশ ঘাঁটিতে তারা হামলা চালাবে কিনা। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প প্রকাশ্যেই বলে আসছেন এই ঘটনায় শুধু আসাদকে দোষারোপ করলে হবে না, তার সমর্থনদাতারাও দায়ী।

ট্রাম্পের পদক্ষেপের বিষয়ে কারফেলা জানান,  সরাসরি সেনা পাঠাতে চাইবে না যুক্তরাষ্ট্র। হয়তো গত বছরের মতো  ক্ষেপণাস্ত্র হামলাই করবে তারা। কারণ, সিরিয়ায় কোনও মার্কিন সেনা মারা গেলে যুদ্ধ অন্যদিকে মোড় নিতে পারে।

সিরিয়ার খুব কাছেই রয়েছে ইউএসএস ডোনাল্ড কুক নামের ডেস্ট্রয়ার। রয়েছে একটি ফরাসি যুদ্ধজাহাজও। ২০১৭ সালে লিবিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা মার্কিন বি-টু বোম্বার যুদ্ধবিমানও কাছাকাছিই রয়েছে সিরিয়ার। 

Donald-Trump-and-Vladimir-Putin-ISIS-561361

তবে হামলা চালালে এর প্রতিক্রিয়া অনিশ্চিত। রাশিয়া অবশ্য হুঁশিয়ারি দিয়েছে, সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হলে তারা প্রতিহত করবে। বুধবার রুশ সেনাবাহিনী অভিযোগ করে, হোয়াইট হেলমেটস রাসায়নিক হামলার নাটক তৈরি করেছে। 

সিরিয়ায় টারটাস ও মেইমিম নামে দুটি বিমানঘাঁটি রয়েছে রাশিয়ার। সেখানে তাদের এস-৩০০ ও এস-৪০০ মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি জানায়, রাশিয়া এখন জিপিএস জ্যামার ব্যবহার করে মার্কিন ড্রোন প্রতিহত করতে সক্ষম। র‍্যান্ড করপোরেশনের জ্যেষ্ঠ রাজনীতি বিশ্লেষক বেন কনেবল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে, তারা যেন কোনও রুশ নাগরিক বা তাদের সামরিক ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত না করে। তিনি সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইচ্ছাকৃত বা ভুলবশত কোনও রুশ সেনাকে হত্যা করে তবে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।