গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে শিশুহত্যার নিন্দা জাতিসংঘ দূতের

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় শিশুহত্যার নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত নিকোলাই লাদেনভ। শুক্রবার টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘শিশুদের গুলি করা ভয়াবহতম নিষ্ঠুরতা। গাজায় আজ এভাবে শিশুহত্যা কিভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হতে পারে? এটা হতে পারে না! এই ঘটনা ক্ষোভ বাড়িয়েছে এবং এটি আরও হত্যাকাণ্ডের জন্ম দেবে। শিশুদের অবশ্যই নৃশংসতা থেকে রক্ষা করতে হবে। তাদের প্রতি সহিংসতা বা হত্যাকাণ্ড হওয়া উচিত নয়। এই দুঃখজনক ঘটনার অবশ্যই তদন্ত হতে হবে।’

শুক্রবার গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ওই সমাবেশে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এক শিশুসহ চারজন নিহত হন। আহত হন আরও ৭০০ ফিলিস্তিনি। এ নিয়ে গত তিন সপ্তাহে নিজ ভূমিতে ফেরত যাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভরত অন্তত ৩৫ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ১০ হাজার ফিলিস্তিনির উপস্থিতিতে এসব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল ‘রাইট অব রিটার্নের’ নীতি মেনে নেওয়ার দাবিতে।

গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন নামে পরিচিত হয়ে উঠা দীর্ঘ কর্মসূচীর অংশ ছিল শুক্রবারের বিক্ষোভ। গত মার্চ মাসে ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা গিয়ে ৩৯-এ দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, একই সময়ে মোট চার হাজার জন আহত হয়েছে।

ইসরায়েল ইহুদিদের জন্য ‘ল অফ রিটার্ন’ কার্যকর করেছে। এই আইনের আওতায় দুনিয়ার যে কোনও স্থানে থাকা ইহুদিরা ইসরায়েলে গিয়ে বৈধভাবে বসবাস করতে পারে। ফিলিস্তিনিদের দাবি, ওই আইনের মতো তাদের জন্যও  ‘রাইট টু রিটার্ন’ নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। এই নীতির বক্তব্য হচ্ছে, যেসব ফিলিস্তিনি নাগরিক শরণার্থী হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তারা বা তাদের উত্তরসূরিরা যদি আবার মাতৃভূমিতে ফিরতে চান তাহলে তাদের সে সুযোগ দিতে হবে। একইসঙ্গে তাদের নিজেদের বা উত্তরাধিকার সূত্রে থাকা সম্পত্তিও তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে। কোনও ফিলিস্তিনি যদি ফিরে আসতে না পারে তাহলে তাকে তার সম্পত্তির মূল্য দিয়ে দিতে হবে। তবে ইসরায়েল মনে করে, ফিলিস্তিনিদের ওই দাবি অবাস্তব।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার অন্তত ৭২৯ জন ফিলিস্তিনি ইসরায়েল সীমান্তের কাছে হওয়া প্রতিবাদ সমাবেশে আহত হয়েছেন। এদের কেউ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, কেউ টিয়ার শেলের আঘাতে জর্জরিত হয়েছেন। যে চারজন মারা গেছে তাদের নাম মোহাম্মদ ইব্রাহিম আইয়ুব (১৫), আহমেদ রাশেদ (২৪), আহমেদ আবু আকিল (২৫) ও সাদ আব্দুল মাজিদ আব্দুল-আল আবু তাহা (২৯)।

প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারে আন্তর্জাতিক মহলের অব্যাহত সমালোচনার পরও ইসরায়েল নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানো থামাচ্ছে না। এমনকি সীমান্তে স্নাইপারও মোতায়েন করেছে দেশটি।

আল জাজিরা’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের সীমান্ত ঘেঁষে কর্মসূচি চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে তারা ৩০০ মিটার এগিয়ে গেছে ইসরায়েল সীমান্তের দিকে। এখন তাদের লক্ষ্য চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ঠিক ইসরায়েল সীমান্তে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানানো। আর ইসরায়েলিদের অস্বস্তি সেখানেই। তারা কোনওভাবেই চায় না, ফিলিস্তিনিরা সীমান্তের কাছে যাক। ওই আন্দোলনে ফিলিস্তিনের অনেকগুলো পক্ষের সম্মতি রয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত অবরুদ্ধ গাজাবাসীরও  ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। সূত্র: আল জাজিরা।