পরিবেশকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান এইচআরডব্লিউ’র

পরিবেশকর্মীদের সুরক্ষায় গত মাসে এক মাইলফলক চুক্তিতে উপনীত হয় ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলো। পরিবেশের জন্য কাজ করেন এমন ব্যক্তিদের জন্য এমন উদ্যোগ এটাই প্রথম। পরিবেশের এই দুঃসময়ে এবারের ধরিত্রী দিবসে এটি একটি ইতিবাচক অনুস্মারক। কেননা এখনও দুনিয়ার নানা জায়গায় পরিবেশকর্মীদের নানা ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়। এমন বাস্তবতায় এবারের ধরিত্রী দিবসে পরিবেশকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। রবিবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে এ আহ্বান জানান এইচআরডব্লিউ’র পরিবেশ ও মানবাধিকার বিভাগের পরিচালক মার্কোস ওরেলানা।

nonameপরিবেশকর্মীদের সুরক্ষায় কোস্টা রিকার ইসকাজু’তে গৃহীত চুক্তিতে পরিবেশের জন্য যারা কাজ করেন তাদের ওপর হামলা বা হুমকি মোকাবিলার কথা বলা হয়েছে।

মার্কোস ওরেলানা বলেন, অংশীদার পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কাজ সংকটময়। তবে এই চুক্তিতে পরিবেশকর্মীদের জন্য সেই সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

এদিকে প্লাস্টিক দূষণ বন্ধের আহ্বানের মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে এবারের ধরিত্রী দিবস। আর্থ ডে নেটওয়ার্ক নামে একটি সংস্থার উদ্যোগে স্বাস্থ্যকর প্রকৃতির বিষয়টি সামনে রেখে এবার ৪৮তম বার পালিত হচ্ছে দিবসটি। এই বছরের আয়োজনে ১৯২টি দেশের শত কোটিরও বেশি মানুষ অংশ নিচ্ছেন। পরিবেশগত বিষয়ে বৈশ্বিক দিবস হিসেবে ধরিত্রী দিবস বিশ্বের সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক দিবস বলে বিবেচিত হয়। প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ আর পুনব্যবহারের প্রতি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করাকেই এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রতি ধরিত্রী দিবসে বিশ্বের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার উদ্যোগে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রেখে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়। প্রতিবছর ২২ এপ্রিল দিবসটি পালিত হয়।

১৯৭০ সালে পরিবেশ আন্দোলনের সূচনা থেকেই ধরিত্রী দিবস পালন হয়ে আসছে। আধুনিক পরিবেশবাদের জন্মের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে র‌্যাচেল কারসনের লেখা বই ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’ এর প্রকাশন। ১৯৬২ সালে কীটনাশকের বহুল ব্যবহারের ক্ষতি নথিভুক্ত করে ওই বই প্রকাশিত হয়। ২৪ টি দেশে পাঁচ লাখ কপি বিক্রি হলে পরিবেশগত বিষয়ে জনসচেতনতার বিচ্ছুরণ ঘটে আর তা সংহত হয়েই প্রথম ধরিত্রী দিবস পালিত হয়। আগামী ২০২০ সালে ধরিত্রী দিবসের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপিত হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান্তা বারবারায় ব্যাপক তেল ছড়িয়ে পড়ার ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করে মার্কিন সিনেটর গেইলর্ড নেলসন প্রথম এই ধারণা দেন। তিনি  যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলেন। প্রথম ধরিত্রী দিবসেই ২০ মিলিয়ন আমেরিকাবাসী স্বাস্থ্যকর পরিবেশের দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছিলেন।

এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ২০১৮ সালে দিবসটি প্লাস্টিক দূষণ বন্ধের ডাক সংহত করবে। এর মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিকের একবার ব্যবহার বন্ধে বৈশ্বিক তৎপরতা ও প্লাস্টিক বর্জ্যের ধ্বংসের বিষয়ে সমন্বিত আইন প্রনয়ণের উদ্যোগ। দিনটিতে আর্থ ডে নেটওয়ার্ক বিশ্বের লাখ লাখ মানুষকে প্লাস্টিক ব্যবহার ও এই বর্জের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য ঝুঁকির বিষয়ে সচেতন করবে। প্রতীয়মান হচ্ছে সাগর, পানি ও বন্যজীবনে ধ্বংস না হওয়া প্লাস্টিক বর্জ্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

সামুদ্রিক প্রাণীকে বিষাক্ত ও আহত করার পাশাপাশি খাদ্যপণ্যে প্লাস্টিকের সর্বব্যাপী উপস্থিতি মানুষের হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলছে। জীবন শঙ্কাকারী নানা রোগ ও আগাম বয়ঃসন্ধির কারণ হচ্ছে তা। প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে আমাদের গ্রহের টিকে থাকাকেও চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। এসব দূষণ বন্ধেরে জন্য লাখ লাখ ডলার ব্যয়ে প্রচারণা শুরু করেছে আর্থ ডে নেটওয়ার্ক। সংস্থাটি বলছে, তাদের লক্ষ্য হলো প্লাস্টিকের একবার ব্যাবহার বন্ধ করা, বিকল্প জীবাশ্মভিত্তিক উপাদানের ব্যবহার ও প্লাস্টিকের শতভাগ পুনব্যবহারে  উদ্বুদ্ধ করা। এছাড়া কর্পোরেট ও সরকারের জবাবদিহিতার মাধ্যমে প্লাস্টিক বিষয়ে মানুষের আচরণ পরিবর্তন করা আমাদের লক্ষ্য।

আর্থ ডে নেটওয়ার্কের প্রেসিডেন্ট ক্যাথলিন রজার্স বলেন, প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে লাভের বিষয়ে সচেতনতা সামুদ্রিক ঢেউয়ের মতো বাড়ছে।  কয়েকটি দেশ ও সরকার ইতোমধ্যেই অগ্রদূত বলে বিবেচিত হচ্ছে। আর্থ ডে নেটওয়ার্ক বিশ্বাস করে এই সামুদ্রিক ঢেউকে প্লাস্টিক দূষণ বন্ধের একটি স্থায়ী সমাধান হিসেবে পরিণত করতে পারবে।

আর্থ ডে নেটওয়ার্কের প্লাস্টিক দূষণ বন্ধের সচেতনতা প্রচারণা প্রধান উপাদান চারটি। প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে বৈশ্বিক কাঠামোর প্রতি সমর্থন আদায়ে তৃণমূল পর্যন্ত আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়া, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষদের সচেতন করে, উদ্বুদ্ধ ও সক্রিয় করে সরকার ও কর্পোরেশনগুলোর কাছে প্লাস্টির নিয়ন্ত্রণ ও দূষণ বন্ধের দাবি তোলা, বিশ্বব্যাপী মানুষদের প্লাস্টিক বর্জন, ব্যবহার কমানো, পুনব্যবহার ও পুননবায়নের জন্য নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলা এবং প্লাস্টি দূষণ মোকাবিলায়  স্থানীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য পদক্ষেপকে উদ্বুদ্ধ করা।