ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মিরের কাঠুয়ায় আট বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদকারীদের মধ্যে আইএস সংযোগ খুঁজছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। কেরালা রাজ্য বিজেপি’র সাধারণ সম্পাদক আর টি রমেশ-এর দাবি, যেসব পোস্টারে ধর্ষণের পর খুন হওয়া ওই শিশুর জন্য ন্যায়বিচারের কথা বলা হয়েছে; সেগুলো আইএসপন্থী একটি গ্রুপের তৈরি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর সোশ্যাল মিডিয়ার ওই গ্রুপটি চালানো হয় শ্রীলঙ্কা থেকে।
কেরালা বিজেপি’র দাবি কাশ্মিরের কাঠুয়ায় শিশু আসিফার ধর্ষকদের বিচার দাবিতে হরতাল আহ্বানের সঙ্গেও আইএসের যোগসাজস রয়েছে। এই যোগসাজসের তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছে দলটি। এ ব্যাপারে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-এর কাছে অভিযোগ জানানোর কথাও জানিয়েছে দলটি।
পরিকল্পিতভাবে শিশু আসিফাকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় গত ১৬ এপ্রিল কেরালায় স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকটি গ্রুপ থেকে এই হরতালের ডাক দেওয়া হয়। ধরপাকড় চালানো হয় হরতাল সমর্থকদের বিরুদ্ধে। অনেককে গ্রেফতার করা হয়।
২০১৮ সালের মধ্য জানুয়ারিতে কাশ্মিরের কাঠুয়ার উপত্যকায় ঘোড়া চড়ানোর সময় অপহৃত হয় আসিফা। আদালতে দায়ের করা মামলার বিবরণ অনুযায়ী, আসিফা নামের ওই শিশুকে অপহরণের জন্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও দেবীস্থান মন্দিদের হেফাজতকারী সানজি রাম তার ভাগ্নে ও একজন পুলিশ সদস্যকে নির্দেশ দেয়। নির্দেশ বাস্তবায়নের পর সাত দিন ধরে মন্দিরে আটকে রেখে একদল হিন্দু পুরুষ ধর্ষণ করে আসিফাকে। পরে মাথায় পাথর মেরে ও গলা টিপে হত্যা করা হয় তাকে। এর মধ্য দিয়ে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ে ভীতি ছড়ানোর কৌশল নেয় দুর্বৃত্তরা; যেন তারা এলাকা ছেড়ে চলে যায়।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম চ্যানেল নিউজ এশিয়া’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাসানা গ্রামে আর যেন কোনও মুসলিম পরিবার নেই। এটা যেন ধর্ষণে জর্জরিত ভারতের চিত্র বহন করছে। পুলিশ বলছে, সংখ্যালঘু মুসলমানদের তাড়াতেই এই কাজ করেছিল একটি চক্র। আর তাতে সফল হয়েছে চক্রটি।
দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া’র খবরে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগী শিশু আসিফার বাবা মোহাম্মদ ইউসুফ পুজওয়ালা তার স্ত্রী, দুই সন্তান ও গবাদিপশু নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছেন। রাসানায় এখনও যে মুসলমান রয়ে গেছেন তারাও উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
জম্মু ও কাশ্মির ভারতের একমাত্র মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্য। তবে জম্মুর দক্ষিণাঞ্চলে কিছু অংশ হিন্দু অধ্যুষিত। তবে এই হত্যাকাণ্ডের আগ পর্যন্ত রাসানায় হিন্দু-মুসলিম সম্প্রতি মিছিল। পুলিশের কাছে খুব কমই পরস্পরবিরোধী অভিযোগ ছিল তাদের। আসিফার ঘটনাও প্রথমে সবার চোখে পড়েনি। জম্মু আদালতের সামনে হিন্দু আইনজীবীরা চার্জশিট দাখিল না করার দাবি জানান। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে ওই ধর্ষণকাণ্ডে সমালোচনার ঝড় তৈরি হয়।
যশ পল শর্মা নামে এক স্থানীয় জানান, ‘এই ঘটনার পর গ্রাম খালি হয়ে গেছে। কেউ কারও সঙ্গে কথাও বলতে চান না।’ তিনি বলেন, রাসানা এক বিভীষিকার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, চ্যানেল নিউজ এশিয়া।