ফেসবুক কেলেঙ্কারির পর ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে বিতর্কিত ক্যামব্রিজ অ্যানালেটিকা

ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বেহাত তথ্য ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগের মুখে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ অ্যানালেটিকা ও তাদের মূল প্রতিষ্ঠান এসসিএল লিমিটেড। বুধবার এক ঘোষণায় প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, সব ধরনের গ্রাহকই চলে যাওয়ায় তাদের ব্যবসা চালানোর মতো অবস্থা আর নেই। তারা আইনত দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার জন্যও আবেদন করবে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তাদের বিষয়ে ‘ভিত্তিহীন’ খবর প্রকাশিত হওয়াকেই তারা এই অবস্থার জন্য দায়ী বলে মনে করে।

Cambridge-Analytica-Facebook-1

সম্প্রতি ক্যামব্রিজ অ্যানালেটিকার বিরুদ্ধে ৫ কোটির বেশি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে তথ্য নিয়ে তার অপব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ উত্থাপনকারী ক্রিস ওইলি দাবি করেন, প্রায় ৫ কোটি ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে তথ্য সংগ্রহ করেছে ক্যামব্রিজ অ্যনালেটিকা। এসব প্রোফাইলের মধ্যে বেশিরভাগই মার্কিন নাগরিকদের প্রোফাইল। এটি ফেসবুকের অন্যতম বড় তথ্য ফাঁসের ঘটনা। এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের হেয় করা হয়েছে।

ক্যামব্রিজ অ্যানালেটিকার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, গ্রাহক চলে যাওয়ার পাশাপাশি বাড়তে থাকা আইনি লড়াইয়ের খরচ সামলাতে তারা হিমশিম খাচ্ছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বেহাত হওয়া তথ্য ব্যবহার করার ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর সংবাদমাধ্যমে লাগাতার খবর প্রকাশিত হয়েছিল। যার প্রেক্ষিতে তাদের গ্রাহকরা চলে গেছে।

প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, কয়েক মাস ধরে ৮৭ মিলিয়ন ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য অযথার্থভাবে ব্যবহার করার যে অভিযোগ ক্যামব্রিজ অ্যানালেটিকার বিরুদ্ধে উঠেছে তার বিরুদ্ধে বারবার সংশোধনী দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তারপরও প্রতিষ্ঠানটিকে ‘খল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অথচ তারা যা করেছে তা ‘আইনত বৈধ’ এবং রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক অনলাইন বিজ্ঞাপনের জগতে ‘ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য’।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নালের খবরে বলা হয়, বুধবার থেকে কোম্পানিটি কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কর্মীদেরও কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির লন্ডন অফিস থেকে ক্যামব্রিজ অ্যানালাইটিকা প্রতীকও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আর ওয়াশিংটন ডিসি অফিসে যোগাযোগ করা হলেও কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।

প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসা বন্ধ করার ঘোষণা দিলেও তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের ডাটা রেগুলেটর কর্তৃপক্ষ। ক্যামব্রিজ অ্যানালেটিকার বিরুদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বন্ধ হয়ে গেলেও এর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে তথ্যানুসন্ধান চলবে বলে জানিয়েছে সরকার। যুক্তরাজ্যের তথ্য কমিশনারের দফতর থেকে একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আরও কোনও কোম্পানি আমাদের নিরীক্ষা ও তদন্তের ক্ষমতা ব্যবহার করছে কিনা সে বিষয়ে আমরা নিবিড় পর্যবেক্ষণ চালু রাখবো।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্যমতে, ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনকে প্রভাবিত করার প্রাথমিক লক্ষ্য নিয়েই ২০১৩ সালে ক্যামব্রিজ অ্যানালাইটিকা চালু করা হয়। ধনকুবের মার্কিন রিপাবলিকান দাতা রবার্ট মার্সার ও পরবর্তীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন প্রতিষ্ঠানটিতে ১৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন। ক্যামব্রিজ অ্যানালাইটিকা নিজেদের অভিষ্ট বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য তথ্য সংক্রান্ত সেবাদাকারী এবং ভোক্তা গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবি করতো।