তিব্বতীয় সাংবাদিকের মুক্তির দাবিতে চীনা প্রেসিডেন্টের কাছে খোলা চিঠি

তিব্বতীয় সাংবাদিক তাশি ওয়াংচুক’কে মুক্তি দিতে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর কাছে একটি খোলা চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষ্যে দুনিয়ার খ্যাতনামা লেখকদের সংস্থা ইংলিশ পিইএন-সহ নয়টি প্রতিষ্ঠান এতে স্বাক্ষর করেছে।
noname

২০১৬ সালে  যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্য দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’কে এক সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর গ্রেফতার করা হয় তাশি ওয়াংচুক’কে। তার বিরুদ্ধে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদকে উদ্বুদ্ধ’ করার চেষ্টার অভিযোগ করা হয়েছে। চিঠিতে এই অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার লঙ্ঘন আখ্যা দিয়ে চীন সরকারের কাছে আমরা অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে তার মুক্তি দাবি করা হয়েছে।

তিব্বতের কিগান্ডো কাউন্টির কর্তৃপক্ষ স্থানীয় তিব্বতীয় ভাষার ক্লাসগুলো বন্ধ করে দিলে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানান তাশি ওয়াংচুক। দুই ভাতিজিকে শেখানোর জন্য তিনি কোনও স্কুল খুঁজে পাচ্ছিলেন না। চিঠিতে বলা হয়, আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো তিব্বত ও চীনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে তিব্বতীয় অ্যাডভোকেট তাশি ওয়াংচুকের ব্যাপারে আমাদের গভীর উদ্বেগের কথা জানাতে লিখছি। নিয়মবর্হিভূতভাবে তাকে আটকে রাখা হয়েছে।

২০১৫ সালের শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’কে সাক্ষাৎকার দেন তাশি ওয়াংচুক। এই সাক্ষাৎকারে তিনি তিব্বতীয় ভাষা শেখার প্রসারে নিজের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। তিনি সাক্ষাৎকারের রেকর্ডের ওপর জোর দেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যেন তিব্বতীয় ভাষা শিক্ষার বিধানের গ্যারান্টি নিশ্চিত করে সে লক্ষ্যে আদালতেরও দ্বারস্থ হওয়ার চেষ্টা করেন তাশি ওয়াংচুক। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের একজন সাংবাদিকও এ সময় তার পাশে ছিলেন।

২০১৫ সালের নভেম্বরে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন এবং ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রকাশিত হয়। এতে তাশি ওয়াংচুক দাবি করেন, ভাষা নিয়ে তার উদ্যোগ শান্তিপূর্ণ এবং অরাজনৈতিক।

চীন সরকারের দাফতারিক চ্যানেলের মাধ্যমে তিব্বতীয় ভাষা শিক্ষার গ্যারান্টির বিয়টি তিনি বদলানোর চেষ্টা করেন। একইসঙ্গে তিনি এটাও পরিষ্কার করেন যে, তিনি তিব্বতের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলছেন না। বরং তার প্রধান ফোকাস তিব্বতীয় ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানো। তবে এসব সতর্কতা সত্ত্বেও ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া। কিছুদিন পর তার বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। এখনও পর্যন্ত তাকে আটক রাখা হয়েছে।

গ্রেফতারের প্রায় দুই বছর পর ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি তাকে রুদ্ধদ্বার বিচারের মুখোমুখি করা হয়। এই বিচার প্রক্রিয়ায় সাংবাদিক এবং কূটনীতিক প্রবেশাধিকার ছিল না। দোষী সাব্যস্ত হলে তার ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

চিঠিতে বলা হয়, তাশি ওয়াংচুকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন চীনা আইন লঙ্ঘন করেছে। কেননা সংবিধানের চতুর্থ অনুচ্ছেদে নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের তাদের নিজেদের ভাষা শেখার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কথ্য ও লেখ্য ভাষা হিসেবে এর ব্যবহার ও উন্নয়নের নিশ্চয়তার কথাও এখানে উল্লেখ রয়েছে।

সংবিধানের ৩৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বাক স্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, সমাবেশ ও সংগঠনের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, চীন সরকারকে অবশ্যই তিব্বতি জনগণের অধিকারকে সম্মান জানানোর আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতাগুলো মেনে চলতে হবে।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ইংলিশ পিইএন, এফআইডিএইচ – ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, ফ্রি তিব্বত, হিউম্যান রাইটস ইন চায়না, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস ফর হিউম্যান রাইটস, ইন্টারন্যাশনাল তিব্বত নেটওয়ার্ক, পিইএন আমেরিকা সেন্টারন, সেফগার্ড ডিফেন্ডারস।

/এমপি/বিএ/