আসিফাকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার স্থানান্তরের প্রশ্নে সিদ্ধান্ত আজ

কাশ্মিরের কাঠুয়ায় যাযাবর মুসলিম বাকারওয়াল গোষ্ঠীর ৮ বছর বয়সী শিশু আসিফা বানুকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে কিনা সে ব্যাপারে সোমবার সিদ্ধান্ত জানাবে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। পরিবারের নিরাপত্তাজনিত শঙ্কা প্রকাশ করে আসিফার বাবা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন, যেন এ মামলার বিচার কার্যক্রম জম্মু-কাশ্মির থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সে আবেদনের প্রেক্ষিতেই সোমবার (৭ মে) সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে সুপ্রিম কোর্ট।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
এ বছরের জানুয়ারিতে কাঠুয়ার উপত্যকায় ঘোড়া চরানোর সময় অপহরণ করা হয় আসিফাকে। আদালতে দায়ের করা মামলার বিবরণ অনুযায়ী, আসিফা নামের ওই শিশুকে অপহরণের জন্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও দেবীস্থান মন্দিরের হেফাজতকারী সানজি রামই তার ভাগ্নে ও একজন পুলিশ সদস্যকে নির্দেশ দেয়। নির্দেশ বাস্তবায়নের পর সাতদিন ধরে মন্দিরে আটকে রেখে একদল হিন্দু পুরুষ ধর্ষণ করে আসিফাকে। পরে মাথায় পাথর মেরে ও গলা টিপে হত্যা করা হয় তাকে। আসিফাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটজনকে অভিযুক্ত করেন ভারতের আদালত। মধ্য জানুয়ারির ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১০ এপ্রিল অভিযোগপত্র জনসম্মুখে আনা হয়। জানুয়ারিতে এ নিয়ে তেমন উত্তেজনা না হলেও এ ঘটনায় অভিযোগপত্র দেওয়ার পর সোচ্চার হয়ে ওঠে বলিউডসহ সারা ভারত। 

নিরাপত্তা শঙ্কা জানিয়ে মামলাটি জম্মু-কাশ্মির থেকে চণ্ডিগড়ে সরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানান আসিফার বাবা। অভিযুক্তরাও মামলার তদন্তের ভার রাজ্য পুলিশের অপরাধ শাখা থেকে সিবিআই-কে হস্তান্তরের জন্য আবেদন জানায়। পাল্টাপাল্টি পিটিশন দায়েরের মধ্যে গত ২৭ এপ্রিল ভারতের সর্বোচ্চ আদালত দায়রা জজ আদালতে চলমান মামলার শুনানি ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত করে। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশরার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এ সিদ্ধান্ত জানায়। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে মামলাটির শুনানি আবারও শুরু হচ্ছে।

রবিবার (৬ মে) আসিফার বাবা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে ফোনে বলেন, বিচার বিভাগের প্রতি তার পূর্ণ আস্থা আছে। মেয়ের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত শান্তি পাবেন না।

অভিযুক্তরা ছাড়া পেলে তাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে পারে এমন আশঙ্কা জানিয়ে রবিবার এনডিটিভিকে আসিফার মা বলেন, ‘তারা যদি মুক্তি পায় তবে আমাদেরকে মেরে ফেলবে। চার গ্রামের মানুষ আমাদের পিছু নিয়েছে। আমরা চারজন মাত্র মানুষ। সব শেষ হয়ে গেছে; আমাদের বাড়ি, আমাদের পুরো সম্পত্তি ধ্বংস হয়ে গেছে।’

আসিফার পরিবার চায়, রাজ্য পুলিশের অপরাধ শাখা থেকেই তদন্ত চলতে থাকুক। কিন্তু অভিযুক্ত আটজনের সবাই মামলার তদন্তের ভার সিবিআইকে দেওয়ার জন্য এরইমধ্যে আদালতে পিটিশন দায়ের করেছে। অভিযুক্তদের বাঁচাতে স্থানীয় রাজনীতিবিদরা মামলার তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইকে দেওয়ার জন্য চাপ তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেছেন আসিফার মা। তিনি বলেন,‘যখন আমরা প্রথম অভিযোগ করেছিলাম,তখন যদি পুলিশ ব্যবস্থা নিতো, তবে বাচ্চাটাকে বাঁচানো যেতো। কিন্তু তারা সাত দিন ধরে চুপচাপ বসে ছিল।’

উল্লেখ্য,রাজ্য পুলিশের অপরাধ শাখার দায়ের করা অভিযোগপত্রে অপহরণ,ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। বলা হয়েছে,এলাকা থেকে সংখ্যালঘু যাযাবর সম্প্রদায়কে নির্মূল করে দিতে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। অভিযোগপত্রে দেবীস্থান মন্দিরের কেয়ারটেকার সানজি রামকে প্রধান ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সানজি রাম ছাড়াও বিশেষ পুলিশ কর্মকর্তা দীপক খাজুরিয়া ও সুরেন্দর ভার্মা, সানজি রামের বন্ধু পরভেশ কুমার, সানজির ভাতিজা (কিশোর অপরাধী) এবং সানজির পুত্র বিশাল জনগোত্রার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা এবং প্রধান কনস্টেবল তিলক রাজ, সাব-ইন্সপেক্টর আনন্দ দত্তের নামও রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তারা সানজি রামের কাছ থেকে ৪ লাখ রুপি ঘুষ নিয়ে অপরাধের প্রমাণ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। এ আট অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।