ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সুরক্ষায় ইরান চুক্তি বাঁচিয়ে রাখতে তৎপর ইইউ

ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমঝোতার পর দেশটিতে বিনিয়োগ করা ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সুরক্ষায় ইরান চুক্তি বাঁচিয়ে রাখতে তৎপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর বুধবার ওই সমঝোতা টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টায় একযোগে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছেন অঞ্চলটির নেতৃবৃন্দ। একইসঙ্গে তেহরানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বজায় রাখার ব্যাপারেও তারা সম্মত হয়েছেন। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই।

সম্ভাব্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সম্প্রতি ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সতর্ক বার্তা উচ্চারণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বলটন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’কে তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করা ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন।

জন বলটন বলেন, এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সম্ভব। এটা নির্ভর করছে অন্য সরকারগুলোর আচরণের ওপর।

মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানে কয়েক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে ফ্রান্সভিত্তিক বহুজাতিক জ্বালানি প্রতিষ্ঠান টোটালের। কিন্তু ইরানে ব্যবসার কারণে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিতে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে নিজেদের সুরক্ষায় তারা হয়তো ইরানের ব্যবসা ছেড়ে দেবে। বুধবার প্রতিষ্ঠানটির তরফে এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

পরমাণু সমঝোতার সাফল্য হিসেবে ইতোপূর্বে টোটালের এই বিনিয়োগকে ইতোপূর্বে স্বাগত জানিয়েছিল তেহরান। আর নিজেদের বাঁচাতে এখন তেহরান ছাড়ার কথা বলছে প্রতিষ্ঠানটি।

শুধু ফ্রান্সের টোটাল নয়, ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে আসার ঘোষণায় আর্থিকভাবে ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে ফ্রান্স, জার্মানিসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো। এমন বাস্তবতায় ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লি মাইরে মন্তব্য করেছেন, ইউরোপ ‍যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের অর্থনৈতিক পুলিশ হিসেবে মানবে না।

ব্রুনো লি মাইরে বলেন, ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বিশ্বের অর্থনৈতিক পুলিশ’ হিসেবে মেনে নেবে না। আমরা কি যথেচ্ছভাবে নেওয়া মার্কিন সিদ্ধান্ত মেনে চলার মতো ক্রীতদাস হতে চাই? নাকি আমাদেরও যে অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে সেই কথা বলতে চাই? আমরা ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছি।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বলটন সিএনএন’কে বলেন, আমি মনে করি, ইউরোপীয়রা আমাদের সঙ্গেই তাদের স্বার্থ দেখতে পাবে।

যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৮টি দেশের নেতারা তাদের প্রথম বৈঠকে ইরান চুক্তি নিয়ে কোনও ত্বরিত সিদ্ধান্তে পৌঁছাননি। তবে চুক্তি রক্ষায় ফ্রান্সসহ অঞ্চলটির বিভিন্ন দেশের নেতারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার রাতে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা ফেডেরিকা মোগেরিনিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার পর বাকি দেশগুলোর করণীয় নির্ধারণে আলোচনা করা হয়। সূত্র: মিডল ইস্ট আই, সিএনএন, রয়টার্স।