ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা: আতঙ্কে জনশূন্য ১০০টি গ্রাম

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সীমান্তবর্তী প্রায় ১০০টি গ্রাম অনেকটা জনশূন্য এলাকায় পরিণত হয়েছে। ভারত-পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরবর্তী ভারতের আরনিয়া শহরের পরিস্থিতিও একই রকম। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও গ্রামবাসীর বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই’র প্রতিবেদনে বলা হয়, সীমান্তবর্তী এসব এলাকায় বসবাসরত ৭৬ হাজারেরও বেশি মানুষ শেল হামলার আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে গোলাগুলিকে কেন্দ্র করে জম্মু, সাম্বা ও কাঠুয়া এলাকার ২০০টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তিন দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা
১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন শেষ হওয়ার পর থেকেই জম্মু ও কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুবার মুখোমুখি যুদ্ধে জড়িয়েছে। ১৯৪৭ ও ১৯৬৫ সালে উপমহাদেশের পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দুটি যুদ্ধে লিপ্ত হয়। সম্প্রতি ওই এলাকায় বেড়েছে গোলাগুলির ঘটনা। কাশ্মির সীমান্তে ভারত-পাকিস্তান পারস্পরিক গোলাগুলির সমান্তরালে চলছে দোষারোপের খেলা। দিল্লি-ইসলামাবাদ এক বছরের মধ্যে ৪০০ বারেরও বেশি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে পরস্পরের বিরুদ্ধে। উসকানির অভিযোগও করছে উভয় পক্ষই। জম্মু-কাশ্মির সীমান্তে গত রবিবার (২০ মে) থেকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আবারও উত্তেজনা শুরু হয়েছে। এ গোলাগুলির ঘটনায় ২২ মে জম্মু-কাশ্মিরের আখনুরে আট মাস বয়সী এক শিশু নিহত হয়েছে।

ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরবর্তী শহর আরনিয়াতে সাড়ে ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষের বসবাস। পিটিআই জানায়, শহরটির বেশিরভাগ বাসিন্দা আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। এটি এখন অনেকটা ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে। হাতেগোনা কয়েকজন বাসিন্দা এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি আছে সেখানে। নিজেদের পোষাপ্রাণী আর ঘরবাড়ি পাহারা দিতে থেকে গেছেন তারা।

জম্মুর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) অরুণ মানহাস পিটিআইকে বলেন, ‘বেশিরভাগ বাসিন্দা অন্যত্র সরে যাওয়ায় আরনিয়া শহরটি ফাঁকা হয়ে পড়েছে। তাদের কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে, আবার কেউ সরকার নির্মিত আশ্রয়শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।’  
মানহাস জানান, আরনিয়ার ৯০টি গ্রামের বাসিন্দাদের কাউকে পুলিশের বুলেটপ্রুফ গাড়িতে করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, আবার কেউ কেউ নিজেরাই সরে গেছেন। গত কয়েক দিনে ৭৬ হাজারেরও বেশি মানুষ নিরাপদে সরে গেছে এবং তাদের জন্য বেশ কিছু আশ্রয়শিবির স্থাপন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আরনিয়ার বাসিন্দা ৭৮ বছর বয়সী বিশান দাস বলেন, ‘১৯৭১ সালের পর আমি এতো বেশি শেল হামলা হতে দেখিনি। এমনকি যুদ্ধের সময়ও পাকিস্তান আমাদের এতো বেশি করে নিশানা বানায়নি।’

বিশানের মতোই আরপুরার জোরাফার্মের বাসিন্দা সাত্তার দিন গুজ্জার। কুল্লা নামে পরিচিত ঘাস ও মাটি দিয়ে তৈরি ঘরে বসবাস করতেন তিনি। সাত্তার জানান, গোলার আঘাতে তার কুল্লাসহ আরও ২০টি কুল্লা পুড়ে গেছে।

রাম সিং নামে আরনিয়ার এক বাসিন্দা পিটিআইকে বলেন, ‘আমি এতো তীব্র শেল হামলা আর দেখিনি। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় এমনটা হয়েছিল। এরপর এতো বেশি সংখ্যক মর্টার বোমা আরনিয়ায় পড়তে দেখা যায়নি।’